ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাড়ির পাশের কবরস্থানে সাংবাদিক তুহিনের দাফন সম্পন্ন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৮ আগস্ট ২০২৫  
বাড়ির পাশের কবরস্থানে সাংবাদিক তুহিনের দাফন সম্পন্ন

সাংবাদিক তুহিনের মরদেহ শুক্রবার বিকেলে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়

সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের (৩৮) দাফন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় নিজ বাড়ির পাশের সামাজিক কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) মাগরিবের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।

আরো পড়ুন:

এর আগে, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় জুমার নামাজের পর তুহিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে তুহিনের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। 

সাংবাদিক তুহিন ভাটিপাড়া গ্রামের মো. হাসান জামাল ও সাবিহা খাতুন দম্পতির ছেলে। তিনি ছিলেন ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট। তার স্ত্রীর নাম মুক্তা আক্তার। তাদের সংসারে দুই ছেলে রয়েছে। তুহিনের বড় ছেলের নাম তৌকির (৭) ও ছোট ছেলের নাম ফাহিম (৩)।

সন্তানের শোকে আহাজারি করা তুহিনের ৭৫ বছর বয়সী মা সাবিহা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে তুহিন বুধবার বলেছিল, আমি তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাব। ডাক্তার অপারেশন করানোর কথা বললে, অপারেশন করাব। আম্মা কোনো চিন্তা করো না। তুমি ভালো হয়ে যাবে।” 

তুহিনের জানাজায় অংশ নেন গ্রামের বাসিন্দা ও স্বজনরা 


ছেলের মৃত্যুতে পাগল প্রায় বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল বলেন, “কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন‍্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো। আমি খুনিদের চাই না। তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।”

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‍“তুহিনরা পাঁচ ভাই। প্রত্যকেই কাজের তাগিদে সিলেট ও গাজীপুরে থাকেন। তারা কেউ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। তুহিন খুব ভালো ছেলে ছিল। নিয়মিত বাবা-মায়ের সেবা ও খোঁজ খবর নিতেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।”

একই এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, “তুহিন সাংবাদিকতা পেশায় খুব ভালো করেছিল। অল্প সময়েই তিনি নাম-ডাক অর্জন করেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তুহিনের আয় বেশি ছিল। সংসারের হাল ধরেছিলেন তিনি। তুহিনের মৃত্যুতে স্ত্রী মুক্তা আক্তার দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়বেন। সরকার যদি সহায়তা করে, তাহলে তুহিনের পরিবারের জন্য খুব ভালো হবে।”

স্বজনরা জানান, আসাদুজ্জামান তুহিন ২০০৫ সালে ফুলবাড়িয়া আল হেরা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০২ সালে সিলেট এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি গাজীপুর ভাওয়াল কলেজ থেকে অনার্স করে সেখানে ভাই জসিম উদ্দিনের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরে ওষুধ কোম্পানি চাকরি নেন। ২০১২ সালে সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন। তার বড় ভাই জসিম ২০০৯ বা ২০১০ সালে  ক‍্যানসারে মারা যান।

বতর্মানে তুহিন ও তার অপর ভাই সেলিম গাজীপুরে বসবাস করছিলেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। অপর ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজার টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং অন‍্য ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে থাকেন। তাদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা ও মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক‍্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাদের দেখভাল করেন।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

ঢাকা/মিলন/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়