সাংবাদিক তুহিন হত্যা: বিচার চেয়ে আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ

গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার প্রতিবাদে শরীয়তপুর, ঝিনাইদহ, শেরপুরে এবং পঞ্চগড় বিক্ষোভ করেছেন সাংবাদিকরা। রবিবার (১০ আগস্ট) তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। 

সংবাদিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তুহিনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনায় তারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন।

শরীয়তপুর:
আজ সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ পেশাদার সাংবাদিক ফোরাম (বিপিজেএফ) শরীয়তপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এর আগে জেলা প্রশাসক মিজ তাহসিনা বেগমের কাছে স্মারকলিপি দেন সাংবাদিকরা। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শুধু গাজীপুরে নয়, সারা দেশেই এখন সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিপিজেএফ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জামাল মল্লিকের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক রোমান আকন্দের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- মানবজমিনের শেখ খলিলুর রহমান, যুগান্তরের কেএম রায়হান কবীর, চ্যানেল আইয়ের এসএম মজিবুর রহমান, নয়া দিগন্তের বোরহান উদ্দিন রাব্বানী, প্রথম আলোর সত্যজিৎ ঘোষ, চ্যানেল ২৪-এর নুরুল আমিন রবিন, এনটিভির আব্দুল আজিজ শিশির, এখন প্রতিনিধি কাজী মনিরুজ্জামান, সময় টিভির বিএম ইস্রাফিল, দিনকাল প্রতিনিধি ও বিটিএসএফর মহাসচিব মো. আল-আমিন শাওন, নিউ এইজের এমবি কাজী নাসির, চ্যানেল এস-এর খোরশেদ আলম বাবুল, কালের কন্ঠের শরীফুল আলম ইমন। মানববন্ধনে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

ঝিনাইদহ:
সারা দেশে সাংবাদিক নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং গাজীপুরে আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার বিচার চেয়ে ঝিনাইদহে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করেছেন মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সকালে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।

মানববন্ধন শেষে ঝিনাইদাহ শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে মৌন মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মডার্ন মোড়ে দিয়ে শেষ হয়।

সংগঠনটির আহ্বায়ক সাংবাদিক এম আর রাসেলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- ঝিনাইদহ মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সদস্য সচিব সাংবাদিক শেখ ইমন, ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতি এম এ কবির, সাংবাদিক সম্রাট হোসেন, সুজন বিপ্লব, এম বুরহান উদ্দীন, এস এ এনাম। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতি সংগঠনের নেতারা।

শেরপুর:
শেরপুরে প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাকন রেজার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সোহেলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুগনিউর রহমান মনি, সিনিয়র সাংবাদিক দেবাশীষ সাহা রায়, জিএম আজফার বাবুল, মনিরুজ্জামান রিপন, সুলতান আহমেদ ময়না, নাঈম ইসলাম, জাহিদুল হক মনির।

বক্তারা বলেন, গত ফ্যাসিস্ট শাসনামলের দেড় দশকে সাংবাদিক সাগর-রুনীসহ অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত ৩০ বছরে ৩৫ জন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনার কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আমরা চাই অন্তবর্তী সরকার সাংবাদিক হত্যার বিচার করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে।

পঞ্চগড়:
দুপুরে পঞ্চগড় শেরে বাংলা পার্ক সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে দাড়িয়ে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন করেন সাংবাদিকরা।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা গণমাধ্যম জগতের ওপর আঘাত। সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির সেবায় দিনরাত পরিশ্রম করেন, অথচ বারবার তাদের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। তুহিন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

তারা আরও বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে। আমরা আর কোনো সাংবাদিকের রক্ত দেখতে চাই না।

সাংবাদিক লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সফিকুল আলম, সংবাদ সারাবেলা পত্রিকার শাহজালাল, বাংলা ভিশনের মোশারফ হোসেন, রাইজিংবিডির আবু নাঈম, চ্যানেল ওয়ানের আব্দুল্লাহ আল মামুন রনিক, বিজয় টিভির ইনশান সাগরেদ, নাগরিক টিভির সাঈদুজ্জামান রেজা ও বাংলাদেশ জাসদের পঞ্চগড় জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল।

নড়াইল:
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে নড়াইলের লোহাগড়া প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-কালনা-নড়াইল-বেনাপোল মহাসড়কের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

লোহাগড়া প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক সেলিম জাহাঙ্গীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- সাংবাদিক মারুফ সামদানী, মো. খায়রুল ইসলাম, মশিয়ার রহমান, রইচ উদ্দীন টিপু, মো. রেজাউল করিম ও শিমুল হাসান। 

সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। এসময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে। 

ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

তুহিন হত্যা মামলায় গাজীপুর পুলিশ সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে তাদের গাজীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। আদালতের বিচারক মো. আলমগীর আল মামুন প্রত্যেক আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।