ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা, ভিডিও ভাইরালের পর স্বামী বললেন ‘ভুল’ হয়েছে

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১১ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ০৯:৩৩, ১১ আগস্ট ২০২৫
স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা, ভিডিও ভাইরালের পর স্বামী বললেন ‘ভুল’ হয়েছে

রবিবার নিজ বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে কথা বলেন খলিলুর রহমান

শেরপুরের শ্রীবরদীতে অসুস্থ স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন খলিলুর রহমান (৮০) নামের এক বৃদ্ধ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি দাবি করেন, শুধু ভয় দেখাতে এমনটি করেছেন। সমালোচনার মুখে খলিলুর রহমান বলেন, আমি ‘ভুল’ করেছি। 

রবিবার (১০ আগস্ট) রাইজিংবিডিকে খলিলুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমার মনের অজান্তে হয়েছে। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার মাথায় তখন কিছু কাজ করেনি। ৩-৪ দিন ধরে আমার ঘরে তেমন কোনো খাবার নেই। তার মধ্যে আমার গায়ে অনেক জ্বর। প্রায় ২০ বছর ধরে অসুস্থ ও ছয় বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী আমার স্ত্রী খোশেদা বেগম। তাকে তো আমিই দেখাশোনা করি। প্রস্রাব-পায়খানা পরিষ্কার করি, কাপড় পরিষ্কার করি, ভাত রান্না করে খাওয়াই, এমনকি নখ পর্যন্ত কেটে দেই।”

তিনি বলেন, “আমার কষ্ট তো কেউ দেখে না। আপনারা তো এর সমাধান দিতে পারবেন না। সে কোনো কথা শোনে না, তাই ভয় দেখাইতে এই কাজ করেছি। আমার ভুল হয়েছে।”

স্থানীয়রা জানান, গত ৮ আগস্ট শুক্রবার দুপুরে বিছানায় মলত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে খোশেদা বেগমকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন তার স্বামী। 

তিনি বলেন, “চতুর্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় আমার স্ত্রীর পেটে বাচ্চা মারা যায়। এর পর থেকেই শুরু হয় শারীরিক জটিলতা। আমি আমার স্ত্রীর বোঝা বইছি। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ে বিদেশে শ্রমিকের কাজ করে। অন্য মেয়েটা অন্ধ। সে ঢাকায় ভিক্ষা করে। বিদেশে থাকা দুই সন্তান মাঝে মধ্যে দুই-চার হাজার টাকা দেয়। আর কোনো খোঁজ খবর রাখে না। শুধু ঢাকার মেয়ের ভিক্ষার টাকা দিয়ে সংসার চলেনা। মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। এখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না।”  

স্থানীয়দের মতে, খলিলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীকে সেবা করে আসছেন, তবে অর্থকষ্ট ও শারীরিক ক্লান্তি থেকে অতিষ্ঠ হয়ে এমন কাজ করেছেন। স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা এলাকাজুড়ে উদাহরণ হলেও এ ঘটনার জন্য অনেকে হতবাক। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আবার ধারণ করেন তাদের নাতি খোকন মিয়া। 

গত ৮ আগস্ট স্ত্রীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করেন খলিলুর রহমান


স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার জন্যে সে ঘটনার সময় উপস্থিত থেকেও তার নানিকে বাঁচাতে না এসে উল্টা ভিডিও করেছেন এবং ফেসবুকে শেয়ার করেছন।

এদিকে, নাতি খোকনের দাবি, আমার মা ও মামা দেশের বাইরে থাকে। নানিকে নির্যাতনের ঘটনার চিত্র তাদেরকে পাঠানোর জন্যই আমি ভিডিও করেছি। আমি কোনো ব্লগার নই। 

খোকন আরো বলেন, “আমার ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার আধাঘণ্টার মধ্যে আমি পোস্টটি ডিলিট করে দেই। কিন্তু বাকিরা আমার ভিডিও ডাউনলোড করে তারাই ভাইরাল করার জন্য পোস্ট করেছেন।” 

এ ব্যাপারে কাকিলাকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ বলেন, “আমরা যতটুকু জানি খলিলুর রহমান একজন ভালো মানুষ। তিনি নিজেই স্ত্রীকে দেখাশোনা করেন। হয়তো মানসিক চাপে পড়ে তিনি এমন কাজ করেছে। আমরা নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর রাখবো।”

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, “ভিডিও দেখার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। বিষয়টি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সমাধান হয়েছে শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “আমি ভিডিওটি দেখেছি। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, লম্বা সময় ধরে স্ত্রীকে সেবা করতে করতে নিজেই ক্লান্ত। আমরা চেষ্টা করছি, তাদেরকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রাখা যায় কিনা। আলোচনাও হয়েছে। এতে দুই জনেরই কষ্টের লাঘব হবে এবং সুন্দর জীবন পাবে।” 

ঢাকা/তারিকুল/ইভা 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়