ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

খালেকের বই বিক্রির ৬০ বছর

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১২ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১১:৩০, ১২ আগস্ট ২০২৫
খালেকের বই বিক্রির ৬০ বছর

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের এক কোণায় বসে ছোটদের বই বিক্রি করেন মো. আব্দুল খালেক

প্রতিদিন সকাল হলেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের এক কোণায় এসে বসেন মো. আব্দুল খালেক। ৭৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি হাসপাতালে আসা যাওয়া ও পথচারীদের কাছে বিক্রি করেন ছোটদের বই। শিক্ষার প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে গত ৬০ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন তিনি।

১৯৬৫ সালে কালীগঞ্জ বাজারে মাত্র কয়েকটি পুরাতন বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন খালেক। তখন স্থানীয় পর্যায়ে বইয়ের দোকান বলতে যা ছিল, তা হাতে গোনা। খালেক বলেন, “শিক্ষা যেন সবার হাতে পৌঁছায় সাশ্রয়ী দামে—এই ছিল আমার স্বপ্ন।”

আরো পড়ুন:

খালেক এখনো প্রতিদিন বই নিয়ে বসেন। তার কাছ থেকে বই কিনতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন। অনেকে আসেন পুরোনো দিনের গল্প শুনতে। অনেকে খুঁজে বেড়ান নিজেদের শৈশবের পাঠ্যবই। কেউ কেউ ছোট সন্তানদের প্রথম বই কিনতে আসেন খালেকের কাছে। 

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিসাব ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন খালেক। কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে কালীগঞ্জে আসেন তিনি। তার বাবা কাজ করতেন তৎকালীন এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম কারখানা মসলিন কটন মিলে। শিক্ষাজীবনে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার না করতে পারলেও খালেকের হৃদয়ে ছিল শিক্ষার প্রতি গভীর ভালোবাসা। সেই টান থেকেই বই বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

বয়সের ভারে এখন শরীর আগের মতো সাড়া দেয় না। চোখেও খুব একটা ভালো দেখেন না, করেন চশমার ব্যবহার। মাঝে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে অনেকদিন খালেককে। তবে, সেরে উঠে আবার ফিরে এসেছেন তার চিরচেনা পেশায়। বর্তমানে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই পাশে। একমাত্র কন্যাকে খালেক বিয়ে দিয়েছেন, তিনি এখন শ্বশুরবাড়িতে।

খালেক বলেন, “আমার ব্যাংক ব্যালেন্স নেই। আমার কাছ থেকে মানুষ বই কেনে। আমার কাছ থেকে জীবনের প্রথম বই কিনে যতো মানুষ শিক্ষক, ডাক্তার, লেখক হয়েছে এই গর্বে আমি নিজেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির চেয়েও বড় মনে করি।”

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, “আমরা তখন এমসিএম হাই স্কুলে পড়ি। নতুন বই কেনা সবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। খালেক ভাইয়ের কাছ থেকে পুরাতন বই কিনে মাধ্যমিক শেষ করেছি।”

লেখক ও চিকিৎসক অসীম হিমেল বলেন, “ডিজিটাল যুগে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন খালেক মিয়ার মতো মানুষরা যেন একেকজন আলোর রাখাল। তারা মনে করিয়ে দেন—মানুষকে গড়ার জন্য, একটি জাতিকে জাগানোর জন্য এখনো বইয়ের বিকল্প নেই।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়