ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভারতে গণপিটুনিতে নিহত বাংলাদেশি, লাশের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবার

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১৩ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ২২:৩১, ১৩ আগস্ট ২০২৫
ভারতে গণপিটুনিতে নিহত বাংলাদেশি, লাশের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পরিবার

অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের পর স্থানীয় বাসিন্দাদের গণপিটুনিতে নিহত বাংলাদেশী যুবককে লাশ ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পরিবারের সদস্যরা।

নিহত ওই যুবকের নাম আকরাম হোসেন (৩০)। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকুড়া গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে।

আরো পড়ুন:

সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার খনজয় কৈথাকোণা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সেখানে বাড়িঘরে হামলা ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।।

বুধবার (১৩ আগস্ট) আকরামের পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সূত্রে বিষয়টি জানা যায়। 

জানা গেছে, আকরাম হোসেনসহ আটজন বাংলাদেশি ব্যক্তি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশ করেন। এনিয়ে ইতোমধ্যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুরো খবর প্রকাশ হয়েছে।

সরেজমিনে আকরাম হোসেনের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার মা ফুলেরা বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। ৪ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে খেলাধুলা করলেও বাবার মৃত্যুর কষ্ট তাকে স্পর্শ করছে না। 

ফুলেছা বেগম বলেন, “মানুষই অপরাধ করে। আমার পুলাডা ভুল করলে তার জন্য আইন আছে, বিচার-আদালত আছে। কিন্তু এভাবে পুলাডারে পিডায়ে পিডায়ে মাইরাই ফেলাইছে। ছবি ভোটার আইডি নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে ঘুরেছি। তারা খালি কয়তাছে দিব দিব, কিন্তু দিনতো পার হয়ে যাইতাছে। আমার পুলাতো আইতাছে না। আমি আমার পুলা হত্যার বিচার চাই। তারাতারি লাশ ফিরত চাই।”

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, শনিবার (৯ আগস্ট) মধ্যরাতে আকরামসহ আটজন বাংলাদেশি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। পরে ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা এবং বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা।

আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল পরিচয় দানকারী জামালপুরের মারুফুর রহমান (৩২), জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন (৩০), কুমিল্লার মেহফুজ রহমান (৩৫) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মোবারক হোসেন (৩২)।

এদিকে, গত সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মহেশখোলা সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খনজয় কৈঠাকোনা গ্রামের একটি বন থেকে আকরামকে আটক করে পিটুনি দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে আহত অবস্থায় তাকে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাকে স্থানীয় মহেশখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আকরাম।

এসব প্রতিবেদনে পুলিশ জানিয়েছে, আকরামসহ অন্যদের অনুপ্রবেশ ও অপহরণের চেষ্টার সন্দেহে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় এখনো স্থানীয় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি।

ভারতের খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বানরাপলাং জিরওয়া স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, পরিচয়পত্র, তিনটি ওয়্যারলেস সেট ও একটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়েছে। আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকরাম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”

ঝিনাইগাতী উপজেলা কাংশা ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুসা মিয়া বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আকরাম শ্বশুর বাড়ি থাকতেন। কীভাবে কার কার সঙ্গে ভারতে গিয়েছেন, তা আমরা জানি না। তর স্বজনরাও জানেন না বলে আমাকে জানিয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে গিয়েছিলাম লাশ ফেরত চাইতে।”

আকরামের বড় ভাই শেখ ফরিদ বলেন, “আকরামের স্ত্রী ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে আমাকে জানিয়েছিল। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রথম মৃত্যুর খবর পাই। সেই ছবি দেখে আমরা তাকে চিনতে পারি। তবে কীভাবে সে ভারতে গেল, সে বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তার লাশ ফেরত আনার জন্য আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর পাচ্ছি না। তারা যা কাগজপত্র চেয়েছে, তাই দিয়েছি। তবে তারা এখনো কোনোকিছু বলেনি।”

ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন ৩৯ বিজিবির আওতাধীন ঝিনাইগাতী উপজেলার নকশী বিওপির সুবেদার আব্দুল লতিফ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি। আমাদের একটি টিম তার বাড়িতেও গিয়েছিল। ঘটনার বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।”

এ বিষয়ে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, “ভারতে নিহত আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ঘটনাটি শুনেছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান আছে।”

ঢাকা/তারিকুল/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়