ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের লাশ, চিরকুটে অভাবের কথা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ১৫ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৪:৪৯, ১৫ আগস্ট ২০২৫
একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের লাশ, চিরকুটে অভাবের কথা

মিনারুলের লেখা চিরকুট ও স্বজনদের আহাজারি

রাজশাহীতে একই ঘর থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দিবাগত রাতের কোনো একসময় তাদের মৃত্যু হয়। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়।

মৃতরা হলেন- মিনারুল ইসলাম (৩৫), তার স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলা (৪)। তাদের বাড়ি পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড় গ্রামে।

সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। দুপুর পর্যন্ত তাদের মরদেহ বাড়িতেই ছিল। পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি তদন্ত করছে।

তদন্তকালে তাদের বাড়ি থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ ধারণা করছে, চিরকুটটি মিনারুলের লেখা। চিরকুটে ঋণের দায়ে ও খাওয়ার অভাবে স্ত্রী ও সন্তাদের হত্যার পর আত্মহত্যার কথা লেখা আছে।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক বলেন, “বামনশিকড়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর স্বামী ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী-সন্তানদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।”
 
তিনি আরো বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। চিরকুটে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। তবে, এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হবে।”

চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, “আমি মিনারুল নিচের যে সব লেখা লেখবো। সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।” 

চিরকুটে আরো লেখা আছে, “আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চার জনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।” 

চিরকুটের অপর পাতায় লেখা আছে, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমারা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভাল হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্যে কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।”

ঢাকা/কেয়া/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়