ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ অ্যাখ্যা দিলেন প্রধান শিক্ষক

জয়পুরহাট সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৩, ১৮ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৬:৪৪, ১৮ আগস্ট ২০২৫
দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ অ্যাখ্যা দিলেন প্রধান শিক্ষক

লেখা খারাপ হওয়ায় তাছিন তালহা (৭) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এর দায় এড়াতে উল্টো ওই শিশু শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ অ্যাখ্যা দিয়ে অভিভাবককে গালিগালাজ করেছেন তিনি। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর মাসহ ২৫ জন অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

পরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষকসহ অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন। সে সময় অভিভাবকরা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলির দাবি জানান। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। 

অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাস টেস্ট হিসেবে সবাইকে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া লিখতে দেন। তালহা বেশ কয়েকটি বর্ণ ছোট-বড় করে লিখে শিক্ষককে জমা দেন। কিছু লেখা ছোট-বড় এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় তাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন প্রধান শিক্ষক। এতে তালহার পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম হয়। পরে সমাবেশ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সারি বাঁকা হওয়ায় আবারও তালহাসহ কিছু শিক্ষার্থীকে কঞ্চি দিয়ে মারেন নজরুল ইসলাম। তালহা বাড়িতে এসে বিষয়টি জানালে তার মা মারধরের কারণ জানতে প্রধান শিক্ষকের কাছে যান। এ সময় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাকে ও তার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালিগালাজ করেন নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। 

মারধরের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে প্রধান শিক্ষক শিশু শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজ বানানোর অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তালহার মা তাসলিমা আকতার শাপলা বলেছেন, “আমার ছেলে ওই দিন দুপুরে বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে আমাকে মারধরের বিষয়টি জানায়। পরে আমি ওই শিক্ষকের কাছে মারধরের কারণ জানতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার ছেলে আমার কাছে এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছে। তার ওপর লেখা খারাপ করেছে বলে আমাকে ও আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালিগালাজ করেছে। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র কীভাবে চাঁদাবাজ হতে পারে? ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ওই শিক্ষক। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম কবির বলেছেন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এমন আচরণের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থী কমছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চাইবে, এটা অবিশ্বাস্য।

সেবা আক্তার নামের এক অভিভাবক বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক কোমলমতি শিশুদের সাথে প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করেন। তিনি ছোটখাটো ব্যাপারে শিশু শিক্ষার্থীদের গালমন্দ করেন, মারধর করেন। তাকে আমরা এই স্কুলে দেখতে চাই না।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেছেন, “মাসখানেক আগে ওই ছাত্র আমার কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সেদিন ক্লাসে হট্টগোল করায় ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে মেরেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্রশংসাপত্র কম্পিউটার থেকে তৈরী করতে খরচ হয়। তাই, অল্প পরিমাণে ফি আদায় করি, তবে সবার কাছে নয়।” 

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চাঁদা চেয়েছে, বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, সে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ইতোমধ্যে ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিভাবকরা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।

ইউএনও মনজুরুল আলম বলেছেন, দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রটির মা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/বাকী/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়