ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

অভিযুক্তকে দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠনের অভিযোগ শেবাচিম হাসপাতালে

বরিশাল সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ১৯ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ০৯:১৭, ১৯ আগস্ট ২০২৫
অভিযুক্তকে দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠনের অভিযোগ শেবাচিম হাসপাতালে

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল

অনশনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের পক্ষে মামলার আবেদনকারী ওয়ার্ড মাস্টারকে দায়িত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় ওয়ার্ড মাস্টার ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা নেতৃত্বে ছিলেন।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনশনে ছিলেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ১৪ আগস্ট বেলা সোয়া ১১টার দিকে সেবা প্রত্যাশী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির সিকদার ও তার মাকে মারধর করেন হাসপাতালের কর্মচারীরা। 

এরপর স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাসপাতালের গেটের সামনে মানববন্ধন করে মূল ভবনে ফিরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করে বের করে দেন তারা।

ওইদিন রাতে ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মহিউদ্দিন রনি রড দিয়ে একজনকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্যরা ১০ জনকে পিটিয়েছে এবং নার্স-আয়ারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন।

এদিকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন হাসপাতালের পরিচালক। কমিটির চার নম্বর সদস্য করা হয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীলকে। তবে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ওয়ার্ড মাস্টার ফেরদৌসের সহযোগীতায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বৃহষ্পতিবার হামলার ঘটনায় ওই দুই ওয়ার্ড মাস্টারসহ ১২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পারভেজ, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আল মামুন রাব্বি ও যুবলীগ নেতা ইউসুফ আলী মিলনের সহযোগী ফয়সাল রাব্বী নেতৃত্ব প্রদান করেন। পাশাপাশি রবিবার (১৭ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল প্রতিরোধের প্রস্তুতি হিসেবে ওয়ার্ড মাস্টার ফেরদৌস গাব গাছের লাঠিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করেন স্টাফদের মাঝে।

তবে ওয়ার্ড মাস্টার ছাড়া কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান, ডা. মো. ইখতিয়ার আহসান, উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক মোসাম্মৎ শাহনাজ পারভীন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল জলিল মিয়া। ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটিতে রাখাকে প্রহসন উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট আবু-আল-রায়হান বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রহসন করছে। এটি অত্যন্ত কষ্টের যে, যৌক্তিক দাবিসমূহকে থামিয়ে দিতে হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তাও কাজ করছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি কখনই তদন্ত কমিটিতে থাকতে পারেন না। এটি আইনের লঙ্ঘন। আমি মনে করি অভিযুক্তদের রক্ষা করতে জেনে বুঝেই পরিকল্পনা অনুসারে তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্তকে রাখা হয়েছে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত বলেন, “মামলার বাদী কিংবা থানায় অভিযোগকারী সাধারণত তদন্ত কমিটির সদস্য হন না। তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়। যাতে ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত করা যায়।”

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, “হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের দাপ্তরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তদন্ত কমিটির সভাপতি হলেন উপ-পরিচালক। কমিটিতে একজন চিকিৎসকও রয়েছেন। কমিটির প্রধান যদি চান, তাহলে ওয়ার্ড মাস্টারকে পরিবর্তন করা যেতে পারে।”

অপরদিকে হামলায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নেতৃত্ব থাকার বিষয়ে পরিচালক বলেন, “আমি যোগদানের পর কে কোন দলের তা দেখার সুযোগ হয়নি। সবাই পুরাতন স্টাফ। তবে আপনারা যা বলছেন- তদন্ত কমিটি সেটিও খতিয়ে দেখবে। আর সেরকম সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।”

ঢাকা/পলাশ/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়