ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

১৮ বছর পর ইছামতীতে ফিরলো ২৫০ বছরের পুরনো নৌকাবাইচ 

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৮, ১৯ আগস্ট ২০২৫  
১৮ বছর পর ইছামতীতে ফিরলো ২৫০ বছরের পুরনো নৌকাবাইচ 

মানিকগঞ্জের ইছামতী নদীতে দীর্ঘ ১৮ বছর পর অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা

দীর্ঘ বিরতির পর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ইছামতী নদীতে প্রায় আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ ফিরে এসেছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে টানা ১৮ বছর ধরে নৌকাবাইচের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। 

অবশেষে গত রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে নালী ইউনিয়নের হেলাচিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রতীক্ষিত এ প্রতিযোগিতা।

নৌকা বাইচের দিন ইছামতী নদীর দুই তীরজুড়ে মানুষের ঢল নামে। দুপুরের পর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন নদীর পাড়ে। বাঁশ ও কাপড় দিয়ে বানানো অস্থায়ী মঞ্চ, নৌকা ভর্তি দর্শক আর তীর জুড়ে জনসমুদ্র-সব মিলিয়ে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। নদীর পানিতে বৈঠার ছন্দের সঙ্গে দর্শকের উল্লাসধ্বনি মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক অনন্য আবহ।

নৌকাবাইচে অংশ নেয় ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয়সহ বিভিন্ন এলাকার মোট ১২টি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় বৈঠিয়ার সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত। প্রতিযোগিতা শুরু হলে বৈঠিয়ারা একসঙ্গে স্লোগান দিয়ে বৈঠা চালাতে থাকেন। তীরের দর্শকরা ঢাক-ঢোলের শব্দে তাদের উৎসাহিত করেন। 

আড়াইশ’ বছরের ঐতিহ্যের অংশ এই নৌকাবাইচ ঘিরে এবারও গ্রামীণ জনপদে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। হাজারো মানুষের অংশগ্রহণ ও উচ্ছ্বাস প্রমাণ করেছে, মানুষ এখনো গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। 

স্থানীয়রা আশা করছেন, এই আয়োজন প্রতিবছর নিয়মিত হলে শুধু সংস্কৃতিই রক্ষা পাবে না বরং সমাজে সম্প্রীতি ও আনন্দও ছড়িয়ে পড়বে।

নালী গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ মিয়া তার আট বছরের মেয়ে মনিরাকে নিয়ে বাইচ দেখতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “আগে প্রতিবছরই এই নদীতে নৌকাবাইচ হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য এটা। তাই এবার মেয়েকে নিয়ে এসেছি, যাতে সে আমাদের সংস্কৃতি ও নৌকার নামগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।”

মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাশিদা আক্তার বলেন, “শুধু বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনতাম ইছামতীতে নৌকাবাইচ হতো। এবার এত বছর পর কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। তাই শহর থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি।”

স্থানীয় শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, “গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য নৌকাবাইচ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা খুব জরুরি। এ ধরনের আয়োজন তাদের সংস্কৃতির প্রতি টান তৈরি করবে।”

হেলাচিয়া বাজার বণিক সমিতি এবারের আয়োজক। কমিটির সভাপতি গাজী হাবিব হাসান রিন্টু বলেন, “এত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আমরা অভিভূত। আশা করি এখন থেকে প্রতিবছর এই নৌকাবাইচের আয়োজন করা হবে। এতে গ্রামীণ ঐতিহ্য যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

বণিক সমিতির আরেক সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, “নৌকাবাইচ শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এটি আমাদের সামাজিক মিলনমেলা। এতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে।”

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাশিতা-তুল-ইসলাম বলেন, “নৌকাবাইচ গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক। এত বছর পর এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রশাসন চাই প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এ প্রতিযোগিতা হোক।”

ঢাকা/চন্দন/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়