গ্রামে গলানো হচ্ছে সিসা, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য-পরিবেশ
কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কারখানায় স্তুপ করে রাখা ব্যাটারির অংশবিশেষ
গ্রামের ভেতরেই পরিত্যক্ত ব্যাটারির অংশগুলো মাটির বড় বড় চুলায় পুড়িয়ে গলানো হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া এই কাজ চলে ভোর পর্যন্ত। রাতভর গ্রামের বাতাসে মিশতে থাকে বিষাক্ত ধোঁয়া। যা মানুষ থেকে শুরু করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। ঝুঁকিতে রয়েছে পশু-পাখিও।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের লাকচতল গ্রামের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই সিসা গলানোর অবৈধ কারখানাটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাত হলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের ঝাঁঝালো গন্ধ। এর কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামবাসী। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি। বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে চারপাশের গাছপালাও।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন, ‘‘এই গ্যাস খুবই ক্ষতিকর। নাকে-চোখে লাগে, জ্বলে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পর্যন্ত টিকতে পারছে না। মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’’
অপর বাসিন্দা জান্নাতুল রুমা বলেন, ‘‘আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আগেই ছিল। এখন রাত হলেই সিসা গলানোর ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়। চোখ জ্বালা করে, কাশিতে দম বন্ধ হয়ে আসে।’’
মাদ্রাসাছাত্র রাকিবুল হাসান ও স্কুলছাত্র মাহিবুল হাসান নীরব জানায়, রাতে সিসা পোড়ানোর গন্ধে এলাকায় টিকে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাপনও কঠিন হয়ে পড়েছে।
‘সততা ব্যাটারি হাউস’ নামে এই কারখানাটি এই গ্রামে কয়েক মাস ধরে চালাচ্ছেন বগুড়ার আশিক মাহমুদ নামে এক ব্যক্তি। জমির মালিক আলমগীর জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে স্থাপন করা হয় এটি। এখানে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন, সবাই বগুড়া থেকে আসা।
কারখানার ব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘‘আমরা শ্রমিক, কাজ করি আর বেতন নিই। আইন মেনে হয়েছে কি না, সেটা মালিকই বলতে পারবেন।’’
জমির মালিক আলমগীর জাহাঙ্গীর এবং কারখানা মালিক আশিক মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জানি। এই সপ্তাহেই পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’’
ঢাকা/রফিক/এস