ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রামেবি ক্যাম্পাসের গাছ কাটার কথা জানতেন রেজিস্ট্রার!

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ২৮ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৩:৪৫, ২৮ আগস্ট ২০২৫
রামেবি ক্যাম্পাসের গাছ কাটার কথা জানতেন রেজিস্ট্রার!

গোড়া থেকে কেটে ফেলা কাঁচা গাছ

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ক্যাম্পাস থেকে গাছ লুটের কথা আগে থেকেই জানতেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. হাসিবুল হোসেন। গাছ লুটের হোতা হাফিজুল ইসলাম তার কথা বলেই গাছ কেটেছেন। তবে হাসিবুল হোসেন কিছু জানতেন না বলে দাবি করেছেন।

সম্প্রতি ওই ক্যাম্পাস থেকে যখন গাছ কেটে লুট হচ্ছিলো, তখন শ্রমিকদের বাধা দিয়েছিলেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আকাশ। সেসময় শ্রমিকেরা প্রকৌশলী আকাশের সঙ্গে মোবাইলে হাফিজুল ইসলামের কথা বলিয়ে দেন। হাফিজুল তখন আকাশকে জানান, তাদের গাছ কাটার বিষয়টি রেজিস্ট্রার হাসিবুল হোসেন জানেন।

গত সোমবার (২৫ আগস্ট) রামেবি ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক সিরাজুম মুনীরের দপ্তরে গিয়ে এমন বর্ণনা দিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী আকাশ। এসময় কক্ষে অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। আকাশের এমন বর্ণনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

আকাশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেদিন জানান, হাফিজুল ইসলাম রামেবির রেজিস্ট্রারের কথা বলে ক্যাম্পাসের গাছ কাটলেও তার কাছে কোনো লিখিত কাগজপত্র ছিল না। তাই তিনি মোবাইলে যোগাযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মোহা. জাওয়াদুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেনের সঙ্গে। কিছু সময় পর নাজমুল ফোন ব্যাক করে বলেন, “গাছ কাটার বিষয়টি রেজিস্ট্রার অবগত। কাটছে কাটুক, জড়ো করে রাখুক।” তাই তারা বাধা দেননি।

এদিকে এ বিষয়ে ডা. হাসিবুল হোসেন বলেন, ‘‘আমি গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, একটা টাকাও অনিয়ম করে গ্রহণ করিনি। তারা আমার নাম কেন বলবে? আর যদি দায়িত্বপ্রাপ্তরা গাছ কাটা দেখে, তাহলে তারা আমাকে জানাবে অথবা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জানাবে। তারা কেন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে জানাবে?’’

আকাশের এমন বর্ণনা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তা স্বীকার করেননি উপপ্রকল্প পরিচালক সিরাজুম মুনীর। তিনি বলেন, ‘‘তারা এসেছিল, কিন্তু পুরোটা সময় আমি অফিসে ছিলাম না। তারা এমন বর্ণনা দিয়েছেন কি না, তা আমি জানি না।’’ এ বিষয়ে প্রমাণ আছে জানালে তিনি মন্তব্য না করে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী নাজমুল হোসেন অবশ্য সেদিন আকাশের সঙ্গে কথোপকথন হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তার দাবি, তাজা গাছ কাটার আগে ড্রেন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় কিছু গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেগুলোর বিষয়েই রেজিস্ট্রারকে অবহিত করে জড়ো করে রাখতে বলা হয়েছিল। উপসহকারী প্রকৌশলী আকাশও একই দাবি করেছেন।

উল্লেখ্য, নগরের বাজেসিলিন্দা এলাকার আমবাগানে ঘেরা সবুজ ও নির্মল পরিবেশে গড়ে তোলা হচ্ছে রামেবির স্থায়ী ক্যাম্পাস। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। অধিগ্রহণের পর বছরখানেক আগে জায়গাটি বুঝে পায় রামেবি। তারপর থেকেই ২০৫ বিঘা আয়তনের এই জায়গায় চলছে লুটপাট। ড্রেন ও সীমানাপ্রাচীর করতে দরপত্র কিংবা বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই কাজের অংশীদার রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তার হয়ে কাজ দেখাশোনা করেন হাফিজুল ইসলাম।

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু শ্রমিক করাত দিয়ে ক্যাম্পাসে তাজা গাছ কাটছেন। একজন ভিডিও করতে করতে কাছে গিয়ে জানতে চাচ্ছেন তারা কার লোক। এসময় একজন শ্রমিক বলেন, ‘‘আমরা হচ্ছি হাফিজ ভাইয়ের লোক, হাজি সাহেব।’’ 

তবে গাছ কাটার বিষয়টি জানাজানি হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো বালুভরাটের কাজ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ অস্বীকার করে জবাব দিয়েছে। পরে ২৪ আগস্ট একটি কমিটি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চার বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া রামেবি উপাচার্য ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের অনুসারী। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা ও কর্মকর্তারা মিলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। 

এই সিন্ডিকেট একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাকে দিয়ে ক্যাম্পাসের জন্য অধিগ্রহণ করা জায়গা থেকে লুট করিয়েছে সহস্রাধিক তাজা গাছ। লুট করানো হয়েছে পুরনো ভবন ভাঙার ইট, দরজা, জানালা ও এসির মতো আসবাবপত্র এবং পুকুরের মাছ। এছাড়া নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেখিয়ে লুট করে নিয়েছে প্রায় ৪ হাজার গাছের কোটি টাকার আম।

রামেবির এসব লুটপাটের বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, ‘‘এসব বিষয়গুলো আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে আমরা বিষয়গুলো দেখি। আমরা এ বিষয়গুলো ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব। তারপর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/কেয়া/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়