ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আইনজীবীর বিরুদ্ধে বৃদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২২ অক্টোবর ২০২৫  
আইনজীবীর বিরুদ্ধে বৃদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৬৫ বছরের বৃদ্ধা পারুল বেগম। স্বামী হাফিজুর রহমান মুন্সী মারা যান প্রায় সাড়ে ৪ বছর আগে। স্বামী মারা যাবার আগে মেয়ের বিয়ে হলেও এখন তার সংসারে রয়েছে দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ ও ৪ নাতী-নাতনী।

কিন্তু স্বামী মারা যাওয়াই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃদ্ধা পারুল বেগমের। সদর উপজেলার গোবরা মৌজার ৫০ শতাংশ জমির দখল নিতে ২০০৩ সালে তারই সৎ ভাবি জেসমিন আরা তাকে আসামি করে গোপালগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপরই শুরু হয় আদালতে দৌঁড়ঝাঁপ। সংসার সামলাবেন নাকি মামলা চালাবেন- এমন দ্বিমুখী সংকটে পড়েন তিনি।

আরো পড়ুন:

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আদালত তারপক্ষে রায় দিলেও তার আইনজীবী প্রতারণার মাধ্যমে সেই জমি দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ওই জমি এখন হারাতে বসেছেন।

এ জমি ফেরতসহ প্রতারক অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলমের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় তারা জমি ফেরতসহ প্রতারক অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলমের বিচারের দাবি করে। মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগমসহ তার পরিবারের ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগম বলেন, “সদর উপজেলার ১১৬ নম্বর গোবরা মৌজার ২৮৮৯ খতিয়ানের ৩০৮৯ খতিয়ানের ৮৩৭ নম্বর দলিলের ৫০ শতাংশ জমির মালিক আমি। পরে এ জমির মালিকানা নিয়ে সৎ ভাবি জেসমিন আরা আমার নামে মামলা দায়ের করেন। এ মামলা চালাতে আমি আমার আপন ছোট ভাইয়ের শ্যালক অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলমের কাছে যাই। মামলায় আদালত আমার নামে রায় দেন।”

তিনি বলেন, “কিন্তু মামলা চলাকালে অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম প্রতারণা করে মামলার বাদী জেসমিন আরার নামে ২২ শতাংশ, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে নিজের নামে ৩২ শতাংশ এবং তার স্ত্রী তানিয়া আক্তারের নামে ২৬ শতাংশ জমি লিখে নেন। এছাড়া আমার ছেলের কাছে ভুয়া দলিল দিয়ে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।”

তিনি আরো বলেন, “এ নিয়ে তার কাছে জানতে গেলে উকিলবারের ভিতর আমাকে ও আমার ছেলেকে মারধর করে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে কোনো প্রতিকার তো পাইনি, উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও জীবননাশের হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় আমি আমার জমি ফেরতসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।”

ভুক্তভোগীর ছেলে মো. মানিক মুন্সী বলেন, “জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আমাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আমার গর্ভবতী স্ত্রীকেও মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আমাকে জীবন নাশের হুমকি দিলে ভয়ে আমি স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরালয়ে অবস্থান নেই। এ সময় আমার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করে।”

তিনি বলেন, “ওই আইনজীবী আমার কাছে ভুয়া দলিল দিয়ে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এমনকি আমি সাড়ে ১৫ লাখ টাকার একটি চেকের মামলা দিলেও ওই আইনজীবী আমাকে না জানিয়ে আসামিদের সঙ্গে রফাদফা করেন। আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।”

ভুক্তভোগী মোছা. পারুল বেগমের জামাতা বলেন, “আমার শ্বাশুড়ী আদালত থেকে রায় পেলেও অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম প্রতারণা করে জমি লিখে নিয়েছে। আমরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও কোনো বিচার পাচ্ছি না। জেলা প্রশাসক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দাবি জানাই, আমরা যেন সুষ্ঠু বিচার পাই।”

এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট মো. রবিউল আলম বলেন, “এ জমি নিয়ে তারই সৎ ভাবি জেসমিন আরা মামলা দায়ের করেন। এরপর তিনি আমাকে প্রথমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়। পরে আমার কাছে জমি বিক্রি করেন। তার জমি আমি প্রতারণা করে নিয়েছি- এটা পুরোপুরি মিথ্যা।”

তিনি বলেন, “তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছিলো। কিন্তু কাগজপত্রে আমি এসব জমি পাই। পারুল বেগম আমার কাছে জমি বিক্রি করে বিভিন্ন সময় দামবাবদ টাকা নিয়েছেন।”

ঢাকা/বাদল/মেহেদী

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়