ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গাজীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়ছেন অধিবাসীরা

গাজীপুর (পূর্ব) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৬, ৩০ নভেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১২:৪৭, ৩০ নভেম্বর ২০২৫
গাজীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়ছেন অধিবাসীরা

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়ায় অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি তালাবদ্ধ ঘর

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে ৮ একর ৯ শতাংশ জমির ওপর ঢাকার বৃহত্তম আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করে সরকার। ১৪২টি ঘর তৈরি করা হয় এখানে। ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ উদ্বোধন করা এই প্রকল্পের ৬৭টি ঘর বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেখানে থাকছেন না কেউ, ফলে জন্মেছে ঝোপঝাড়। সন্ধ্যার পর এসব ঘরের বারান্দায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। 

বাসিন্দাদের অভিযোগ, বরাদ্দ পাওয়া অনেকের আগে থেকে ঘর রয়েছে। এলাকায় কাজের সুযোগ না থাকা এবং শিশুদের পড়ালেখার জন্য সরকারি স্কুলের ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী নন। অনেকে চলে গেছেন, অনেকে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

আরো পড়ুন:

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল ভূমিহীন পরিবারকে স্থায়ী আবাসন দেওয়া। উদ্বোধনের সময় অধিকাংশ ঘরে সুবিধাভোগীরা উঠলেও মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তাদের অনেকে অন্যত্র চলে যান। মানুষ বসবাস না করায় ঘরের সামনে ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ফাঁকা ঘরগুলোতে নিয়মিত বসবাস নেই। খালি ঘরগুলোতে ঝোপঝাড় জন্মেছে, তালাবদ্ধ বারান্দায় মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। আশ্রয়ণ এলাকায় কাজের সুযোগ ও শিক্ষা সুবিধার অভাবে বেশিরভাগ পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী নন। উদ্ধোধনের পর থেকে অনেকে নেই, অনেকেই চলে যাচ্ছেন। মসজিদের ইমামের বেতন পরিশোধের বোঝা অল্প কয়েকজন বাসিন্দার ওপর পড়েছে।

আশ্রয়ণের ২৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা নূর খাতুন অভিযোগ করে বলেন, “অনেক ঘর বরাদ্দপ্রাপ্তদের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরা বারবার আবেদন সত্ত্বেও ঘর পাননি। নগরহাওলা গ্রামের কাজল মিয়ার বরাদ্দ পাওয়া ৩৩ নম্বর ঘর এই অনিয়মের আলোচিত উদাহরণ। তার নিজস্ব বাড়ি রয়েছে।” 

কাজল মিয়া নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার ভিটা-মাটি না থাকার কারণে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে ঘর দিয়েছেন। এখন যদি কেউ এ ধরনের অভিযোগ করেন, সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

১২৬ নম্বর ঘরের মালিক সোহাগ, ২৯ নম্বর ঘরের মালিক রিমা আক্তারসহ আরো কয়েকজন উদ্বোধনের পর থেকে প্রকল্পে বসবাস করছেন না। দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৩৮, ৮৭ ও ১১৮ নম্বর ঘর।

আশ্রয়ণের ১৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা বানু বেগম বলেন, “প্রকল্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য তদারকি বাড়ানো, অনিয়ম তদন্ত ও ফাঁকা ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে পুনর্বণ্টন করা জরুরি। না হলে প্রকল্পের মূল লক্ষ্যকে ব্যাহত হবে।” 

নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল লতিফের স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, “রাতে তালাবদ্ধ ঘরের বারান্দায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। তাদের উপস্থিতির কারণে পরিবেশ অশান্ত হয়। খালি ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে পুনর্বণ্টনের দাবি জানাচ্ছি।”

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “প্রকল্প এলাকায় সরকারি বরাদ্দে স্কুল নির্মাণ করা হয়নি, এটি ব্যক্তি উদ্যোগে হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম বা প্রভাব খাটিয়ে ঘর নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/রফিক/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়