স্মৃতিসৌধে তালা, ফুল দিতে গিয়ে ক্ষুব্ধ সাংবাদিক
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি তালা খুলছেন জেলা প্রশাসনের এক কর্মচারী।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ‘দুর্জয় পাবনা’র প্রবেশ দ্বার তালাবদ্ধ ছিল। শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে গেইটে তালা ঝোলানো দেখে স্থানীয় সাংবাদিকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীরা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় ‘দুর্জয় পাবনা’র তালা খোলা হয়নি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পনের জন্য রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় পদযাত্রা নিয়ে স্মৃতিসৌধের সামনে উপস্থিত হন পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা। এ সময় স্মৃতিসৌধের বাইরে ও ভেতরে চারটি তালা ঝোলানো ছিল। সাংবাদিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ওয়াজেদ মিয়া ও আরদালী সুজন মিয়া। সাংবাদিকরা তালা দেখে গেটের বাইরে পুস্পস্তবক অর্পণ করতে গেলে কিছুক্ষণ পর চাবি নিয়ে হাজির হন আরেক কর্মচারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মচারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আজ কোনো দিবস আছে সেটা তার জানা নেই। আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা আমাকে দেয়া হয়নি। যে কারণে এটার তালা খোলা হয়নি।’’
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘‘এটা আমাদের চেতনার ব্যাপার। বুকে ও মনে ধারণ-লালন করি। আমি নিজেও ছুটে এসেছি। কিন্তু কর্মচারীদের কেন জানানো হয়নি আর খোলা রাখা হয়নি ব্যাপারটা আমার জানা নেই।’’
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এমন দৃশ্য দেখতে হবে এটা মাথায় আসেনি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। অথচ আমাদের সেই চেতনার আজ এই অবস্থা!’’
‘‘আমি মনে করি জেলা প্রশাসনের এটা চরম দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা,’’ বলেন তিনি।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এটা কেমন কথা! তার মানে জেলা প্রশাসন কি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ সেটা জানে না, নাকি জেনে পালন করবে না এবং অন্যদের পালনে নিরুৎসাহিত করতে এমনটি করেছে? তীব্র প্রতিবাদ জানালাম এমন কান্ডে।’’
পাবনা অন্নদা গোবিন্দা পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতীন খান বলেন, ‘‘সকাল আটটায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যাই দুর্জয় পাবনা স্মৃতিসৌধে। কিন্তু গিয়ে দেখি ভিতরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন কী জন্য তালা দেওয়া হলো বুঝতে পারিনি, ভালোও লাগেনি।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
তবে জেলা প্রশাসক শাহেদ মোস্তফার সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকজন সাংবাদিক তার মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
ঢাকা/শাহীন//