ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

খাসিয়াদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করার দাবি

নঈমুদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২১ এপ্রিল ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
খাসিয়াদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করার দাবি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঝিমাইপুঞ্জির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৭২টি পরিবারকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে অভিযোগ করে, তাদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

 

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম-এর  যৌথ উদ্যোগে ‘ঝিমাইপুঞ্জির ৭২টি আদিবাসী পরিবারকে অবরোধ এবং তাদের উচ্ছেদ ও গাছ কাটার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।

 

ঝিমাইপুঞ্জির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৭২টি পরিবারকে জীবন যাপনে সার্বিক নিরাপত্তা বিধানের দাবি জানিয়ে বলা হয়, অবিলম্বে ঝিমাইপুঞ্জির গেট খুলে দিতে হবে। আদিবাসীদের ওপর হুমকি ও অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।

 

তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধার সৃষ্টি না করা এবং তাদেরকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। প্রাকৃতিক বন ও খাসিয়াদের জীবিকা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নিরীহ খাসিয়াদের উচ্ছেদ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্টকারী বাগান কর্তৃপক্ষ ও তাদের মাস্তানদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামাল। এতে আরো বক্তব্য রাখেন বাপার সহসভাপতি বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন, বাপা’র আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক ফাদার জোসেফ গোমেজ প্রমুখ।

 

মূল বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ঝিমাইপুঞ্জির ৭২টি আদিবাসী পরিবারকে আইন বহির্ভূত প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। বিগত কয়েক মাস যাবৎ পুঞ্জিবাসীদের বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্ত, হুমকি-ধামকি ও সর্বশেষ, সরকারি প্রশাসনকে ব্যবহার করে কিছু জমি মৌখিকভাবে খাসিয়া পরিবারকে প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের শতবর্ষের আবাসস্থল থেকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘খাসিয়াদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়ে বাগানমালিক পক্ষ গত ১৮ এপ্রিল, শনিবার সকাল থেকে ঝিমাইপুঞ্জির আদিবাসীদের একমাত্র যাতায়াতের গেটটি বন্ধ করে দেয়। ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ গেটে তাদের লোক বসিয়ে পাহারা দিচ্ছে। এতে আদিবাসীদের  পরিবারগুলো খুবই উচ্ছেদ-আতঙ্কের মধ্যে আছে এবং তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এতে আদিবাসীদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, বাইরে আসা-যাওয়ায় বেআইনী অবরোধ সৃষ্টি করা হয়েছে। খাসিয়া পল্লীর নিরীহ মানুষ বাগানমালিকদের ভাড়াটে-সন্ত্রাসীদের হুমকি ও অত্যাচারে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তাদের অনেক পুরুষ সদস্য পুঞ্জির বাইরে আটকা পড়েছেন। জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপার্জন পান বিক্রি করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের সন্তানরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। এমনকি, অসুস্থ মহিলা রোগীকে হাসপাতালে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

 

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে আজ উচ্ছেদ ও দখলের সংস্কৃতি চলছে। প্রতিবাদী কন্ঠকে করা হচ্ছে রুদ্ধ। দূর্বলকে করা হচ্ছে অবরুদ্ধ ও উচ্ছেদ। রাষ্ট্রযন্ত্র দুর্বলের বিরুদ্ধে এবং সবলকে সুরক্ষা দিচ্ছে। ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের পাশে নাগরিক সমাজকে দাঁড়াতে হবে। ঝিমাইপুঞ্জির খাসিয়াদের সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’

 

সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘ভূমি কমিশন গঠন করে খাসিয়াদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে।’

 

ফাদার জোসেফ গোমেজ এতে বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। খাসিয়াদের ওপর প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।’

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ এপ্রিল ২০১৫/নঈমুদ্দিন/সুমন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়