কুবি শিক্ষার্থী ও তার মাকে হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন
কুবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার বোনের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘তুমি কে আমি কে, সুমাইয়া সুমাইয়া’, ‘আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার বোন কবরে, খুনি কেনো বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে সুমাইয়ার সহপাঠী লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, “গত ৭ সেপ্টেম্বর সুমাইয়াকে হত্যা করা হলেও আমরা জানতে পারি ৮ সেপ্টেম্বর। আজ ১১ সেপ্টেম্বর হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কি কারণে সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে সে রহস্য প্রশাসন উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা আরও জানতে পারি, সুমাইয়া এবং তার মাকে হত্যা করেছে সে ২০২৩ সালের ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামি।”
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ার পরেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত সে বাইরে থাকে কীভাবে? পুলিশ যদি তাকে আগেই গ্রেপ্তার করে রাখত, তাহলে আজকের এই নির্মমতার সাক্ষী হওয়া লাগত না আমাদের। সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার যতদিন নিশ্চিত না হবে, ততদিন আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
কুবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল বাশার বলে, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মাকে হত্যার যে রহস্য তা এখনো উন্মোচন হয়নি। আমরা চাই প্রশাসন তা দ্রুত উন্মোচন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আপনারা একটা টিম করে নিয়মিত আপডেট আমাদের দেন।”
তিনি বলেন, “আজ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি এখানে শেষ নয়, যতদিন পর্যন্ত সুমাইয়া হত্যার বিচার না হবে ততদিন আমরা মানববন্ধন চালু রাখবো। যদি প্রয়োজন হয় আমরা পুরো কুমিল্লা অচল করে দিব। যদি প্রশাসন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন না করে তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”
কুবি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এ রকম নির্মম ঘটনার সম্মুখীন কখনো হয় নাই। কুবির শিক্ষার্থীরা আজ কোথাও নিরাপদ না। কুবির শিক্ষার্থীদের আজকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়, অপহরণ করা হয়, ছিনতাই করা এমনকি হত্যাও করা হয়। আমরা কুবির শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি অতিদ্রুত নিশ্চিত না করা হয় তাহলে কুমিল্লার জমিনকে আমরা সারাদেশ থেকে আলাদা করে দেব।”
লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোসা. শামসুন্নাহার বলেন, “সুমাইয়া খুব নম্র, ভদ্র ও মেধাবী ছাত্রী ছিল। তার সঙ্গে কোনোদিন কারো কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়নি। তার সঙ্গে ঘটা এ রকম নৃশংস ঘটনা যেনো আর কোথাও না ঘটে। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। সুমাইয়া ও তার মায়ের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত যা যা করা লাগবে আমরা লোকপ্রশাসন বিভাগ তা করব “
তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো ঘটনা ও রহস্য যদি থেকে থাকে, তাহলে সেই রহস্য উন্মোচন করতে হবে। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া যাতে দীর্ঘায়িত না হয়। আসামির সঙ্গে জড়িত অন্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এ ঘটনা যাতে কোনোভাবে ধামাচাপা দেওয়া না হয়। প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে উন্মোচন করা হোক।”
গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লার কালিয়াজুরী এলাকায় নিজ ভাড়া বাসা থেকে সুমাইয়া ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি গ্রেপ্তার মোবারক হোসেনই এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা।
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী