ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জিআরই কী, কেন দিতে হয়?

আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ৩ মে ২০২১  
জিআরই কী, কেন দিতে হয়?

মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির ক্ষেত্রে আবেদনকারীর দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত পরীক্ষাটির নাম GRE (জিআরই)। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে (Graduate Record Examination)। 

বলা বাহুল্য, দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে পড়ালেখার মান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে। গ্রেড পয়েন্ট ৪.০০ অর্জন করতে কোথাও ১০০ তে ৮০ নম্বর পেলেই হয়ে যায়, আবার কোথাও ৯৭ নম্বর পেতে হয়। তাই এক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্য দেশের শিক্ষার্থীর সিজিপিএ তুলনা করে, সত্যিকার অর্থে কে বেশি মেধাবী, তা নির্ণয় করা বেশ দুরূহ। এমতাবস্থায় যদি উভয় শিক্ষার্থী একটি বিশ্বমানের মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তাহলে স্কোর দেখে তাদের মেধার তুলনামূলক সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব। 

প্রতিবছর ১৬০টি দেশের ১০০০ এরও বেশি টেস্ট সেন্টারে হাফ মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী GRE টেস্টে অংশগ্রহণ করে। Educational Testing Service (ETS) নামের একটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন পরীক্ষাটির আয়োজন করে থাকে।  

যেসব দেশের জন্য জিআরই প্রযোজ্য 

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপিয়ান কিছু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনের জন্য GRE স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক। এটি মূলত ইঞ্জিনিয়ারিং ও সায়েন্স বিষয়ক কোর্সে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়নের পরীক্ষা হলেও বর্তমানে বিজনেস এবং ল” প্রোগ্রামগুলোতেও GRE(জিআরই) স্কোর গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে যেসব দেশের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়, সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভর্তির ক্ষেত্রে যাদের ভালো GRE স্কোর রয়েছে, তাদের গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া এটি সবসময়ই প্রোগ্রামগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভালো ফান্ড পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়

বর্তমানে দু’ভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেগুলো হলো- জেনারেল টেস্ট ও সাবজেক্ট টেস্ট। তবে, জিআরই বলতে মূলত জেনারেল টেস্টকেই ধরা হয়ে থাকে। জেনারেল টেস্ট এমএস, এমবিএসহ প্রায় সব প্রোগ্রামে গ্রহণ করা হয়।

জেনারেল টেস্টে শিক্ষার্থীদের তিনটি ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে- ভার্বাল, কোয়ান্টেটিভ রিজনিং এবং এনালিটিক্যাল রাইটিং। উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য স্কোর রেঞ্জ– ভারবাল রিজনিংয়ে ১৩০ থেকে ১৭০ এর মধ্যে, কোয়ান্টেটিভ রিজনিংয়ে ১৩০ থেকে ১৭০ এর মধ্যে এবং এনালিটিক্যাল রাইটিংয়ে ‘০’ থেকে ৬ এর মধ্যে স্কোর থাকতে হয়।

এনালিটিক্যাল রাইটিংয়ের সময় এক ঘণ্টা। এসময়ে একজন শিক্ষার্থীকে ইস্যুভিত্তিক এবং আরগুমেন্টেটিভ দুই ধরনের রচনা লিখতে হয়। প্রতি সেকশনে সময় বরাদ্দ থাকে ৩০ মিনিট। ইংরেজিতে লেখার দক্ষতা এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা ভালো হলে রাইটিংয়ে সহজেই ৩.৫ – ৪ পাওয়া সম্ভব।

ভার্বালে দুই সেকশনে ২০টি করে সর্বমোট ৪০টি প্রশ্ন দেওয়া হয় এবং তার জন্য সময় থাকে এক ঘণ্টা। এদিকে কোয়ান্টিটেটিভে একই সংখ্যক প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট করে সর্বমোট ৭০ মিনিট দেওয়া হয়ে থাকে। প্রস্তুতি ভালো থাকলে উভয় সেকশনেই ২৬০-৩৪০ স্কোরের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব। 

এদিকে জিআরই সাবজেক্ট টেস্টে নির্দিস্ট একটি সাবজেক্টের দক্ষতা দেখা হয়। বর্তমানে গণিত, ইংরেজি সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়নের উপর জিআরই সাবজেক্ট টেস্ট আছে। বায়োকেমিস্ট্রি, সেল এবং মলিকিউলার বায়োলজি এবং কম্পিউটার সায়েন্সসহ আরও বেশকিছু বিষয়ের উপর সাবজেক্ট টেস্ট নেওয়া হতো। তবে ২০১৬ সালের পর থেকে সেগুলোর উপর আর জিআরই সাবজেক্ট টেস্ট নেওয়া হচ্ছে না।

যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন

প্রস্তুতির জন্য ফ্রি ম্যাটেরিয়ালগুলো ETS ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। স্যাম্পল প্রশ্নসমূহ এমনকি ফুললেনথ প্র্যাকটিস টেস্টও পাওয়া যাবে। তবে অফিসিয়াল প্রিপারেশন গাইড এবং ম্যাটেরিয়াল পেতে চাইলে সেগুলো এই সাইট থেকেই কিনতে হবে। পরীক্ষার অন্তত ৬ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা উচিৎ। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি মোটেই শুভকর নয়।

রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে

জিআরই এক্সামের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে প্রথমে ETS account খুলতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার পর জিআরই জেনারেল টেস্ট দিতে চান নাকি জিআরই সাবজেক্ট টেস্ট দিতে চান তা ঠিক করতে হবে। এরপর এক্সাম ডেট এবং সেন্টার সিলেক্ট করতে হবে। সিট বুকিংয়ের কাজ হয়ে গেলে পেমেন্ট পেজ আসবে। অনলাইনে ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে জেনারেল টেস্টের জন্য ২০৫ ইউএস ডলার এবং সাবজেক্ট টেস্টের জন্য ফি বাবদ ১৫০ ইউএস ডলার পরিশোধ করতে হয়।

রেজিস্ট্রেশনের জন্য অফিশিয়াল ওয়েবসাইট– https://www.ets.org/gre

পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন কিংবা বাতিল করতে চাইলে

পরীক্ষার তারিখের ৪ দিন আগ পর্যন্ত রিশিডিউল বা ক্যান্সেল করা যাবে। রিশিডিউল বা ক্যান্সেলের ক্ষেত্রে ৫০ ইউএস ডলার ফি জরিমানা দিতে হয়। জেনে রাখা উচিৎ, জিআরই জেনারেল টেস্টের পেমেন্ট করার পর সেটা থেকে কোনোভাবেই সাবজেক্ট টেস্টে শিফট হওয়া যাবে না।

ফলাফল যেভাবে পাওয়া যাবে

কম্পিউটার বেসড জেনারেল টেস্টের অফিসিয়াল ফলাফল ১০-১৫ দিনের মধ্যেই অনলাইনে নিজ একাউন্টে এবং এন্ট্রি করে দেওয়া নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে যাবে। অপর দিকে পেপার বেসড সাবজেক্ট টেস্টের ফলাফল পরীক্ষার ৫ সপ্তাহের মধ্যে অনলাইনে নিজ একাউন্টে এবং এন্ট্রি করে দেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

ফলাফল সন্তোষজনক না হলে সাবজেক্ট টেস্টের ক্ষেত্রে যতবার অফার করা হয়, ইচ্ছা অনুযায়ী ততবার পুনঃপরীক্ষা দেওয়া যায়। তবে কম্পিউটার বেসড জেনারেল টেস্টের ক্ষেত্রে ফলাফল প্রকাশের ২১ দিন পর একবার করে বছরে সর্বোচ্চ ৫ বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে।

সাব্বির/মাহি  

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়