ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এ পথচলা যদি দিগন্তের শেষ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মিলত!

হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৩০ মে ২০২৩   আপডেট: ২১:৪১, ৩০ মে ২০২৩
এ পথচলা যদি দিগন্তের শেষ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মিলত!

‘যেতে নাহি চাহে মন, 
তবু চলে যেতে হয়।
যেতে নাহি দিব হাই,
তবু যেতে দিতে হয়।’

হাজারো স্বপ্ন নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে একসময় তারা এসেছিল জ্ঞান আহরণে। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন পূরণে বিক্ষিপ্ত মনগুলোকে একই সূত্রে গাঁথতে মিলিত হয়েছিলেন তারা। তবে সময়ের লীলাখেলায় আরেক স্বপ্ন পূরণে তাদের বিদায় নিতে হচ্ছে চিরচেনা ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে। যেন আঁধারের গর্ভে বিলীন হওয়া এক প্রজ্বলিত আলোর দিকে ছুটবার একাগ্র প্রয়াস।

বলছি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সদ্য বিদায়ী শিক্ষার্থীদের কথা। গল্পের শুরুটা ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসা ও ভাষার মাস। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একদল স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী ভালোবেসে ভর্তি হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। সংখ্যায় তারা ৪৭ জন। বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী হওয়ায় নিজেদের সংক্ষিপ্ত নাম দিয়েছেন ‘দ্বি এমসিজে’। সম্প্রতি দ্বি এমসিজে তাদের ক্যাম্পাস জীবন শেষ করেছে।

ক্যাম্পাস জীবনের কতশত স্মৃতি। রুটিন মাফিক ক্লাসে যাওয়া। ক্লাস শেষে বিভিন্ন দলে-উপদলে আড্ডায় মেতে উঠা। গন্তব্য অজানা সত্ত্বেও বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া। কারণে-অকারণে প্রাণ খুলে হাসা। সময়ে-অসময়ে গান ধরা। সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ। আরও কত কী!

তাদের মধ্যে মতভেদ ছিল। অভিমান ছিল। ছিল ভালোবাসাও। এইভাবে ভালো লাগা, খারাপ লাগা, মনোমালিন্য আবার বন্ধুত্বের খুনসুটিতেই কেটে গেছে ছয়টি বছর। মাঝে করোনাও কেড়ে নিয়েছে তাদের কিছু সময়। স্নাতকোত্তর শেষ করে সবাই এখন কর্মজীবনে প্রবেশে ব্যস্ত। হয়তো এখন আর আগের মতো গান-আড্ডা হবে না, শোনা হবে না রূপকথার গল্প।

আয়তনে ৫০ একরের ছোট ক্যাম্পাস। তাতে কি! ৪৭ জনের মন তো আর এইখানেই সীমাবদ্ধ নেই। মনের ক্যাম্পাসের বিশালতা পরিমাপের সাধ্য কার? ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবনে, চত্বরে, মিনার কিংবা মাঠে প্রতিধ্বনিত হতো দ্বি এমসিজে। একসময়ের তাদের পদচারণে মুখরিত স্থানগুলো এখন দখল করে নিয়েছে অনুজরা। সময়ের সঙ্গে তারাও একদিন হয়ে যাবে প্রাক্তন।

দ্বি এমসিজের সদস্যরা জানালেন, ক্যাম্পাসের সব স্মৃতিবিজড়িত জায়গায় তাদের অনুভূতি সব বন্দি হয়ে আছে। তাদের শুরুর ক্যাম্পাস আর বর্তমান ক্যাম্পাসের পার্থক্যও বিশাল। ক্যাম্পাস অনেকটা সুসজ্জিত হয়েছে বটে। ফলে মলিন রূপ ধারণ করেছে বিভিন্ন জায়গা। তবে তাদের স্মৃতিগুলো এখনো অমলিন।

কৃষ্ণচূড়া আর জারুলে আবদ্ধ তাদের মুগ্ধতা। ক্যাম্পাসের লাল নীল বাসে বেসুরা গলায় গাওয়া গান। ফ্যাকাল্টি-বিভাগের সিঁড়ি, করিডোর, ক্লাস রুমের সেই আড্ডা। কিংবা শ্রেণি সংকটে অন্যের ক্লাস শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা। এমসিজে বিভাগের সমৃদ্ধির শিকড়ে তো ছিলেন তারাই। শত পাওয়া না পাওয়ার মাধ্যমেই বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তারা। যেই বিভাগ এখন গান আড্ডায় মাতিয়ে রাখে নতুনরা।

বিদায়ের ছায়া পড়েছে এই প্রাঙ্গণে, অশ্রুসিক্ত লোচনে স্মৃতির ভাঙনে। দেখতে দেখতে দীর্ঘ ৬ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এখন সময় বিদায় বেলার। তবে মনের নয়, শরীরের। বিদায় জানানোর জন্য রাঙিয়ে তুলেছিলেন তারা প্রিয় প্রাঙ্গণকে। র‌্যাগ ডে-তে আকাশি আর গোলাপি রঙে সেজে ক্যাম্পাসকে বিদায় বলেছেন তারা।

যেতে নাহি দিব হাই,
তবু যেতে দিতে হয়।

সদ্য বিদায়ী দ্বি এমসিজে সম্পর্কে একই বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম নিলয়ের আবেগঘন কথা- ‘ব্যক্তিগতভাবে দ্বিতীয় ব্যাচের সঙ্গে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিল। তাদের বিদায় বেলায় মন খারাপ হওয়ারই কথা, তাদের সঙ্গে কাটানো কত স্মৃতি, কত মায়া জমে আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। তাদের শূন্যতা অনুভব করবে পুরো এমসিজে বিভাগ। সব বাঁধা পেরিয়ে তারা ছাপিয়ে যাক, জীবনে সফল হোক নিজের মতো করে এটাই প্রত্যাশা।’

যেতে নাহি চাহে মন,
তবু চলে যেতে হয়।

‘সত্যি বলতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে কখন পড়াশোনা শেষ করবো, তা নিয়ে চিন্তা ছিল অনেক বেশি। দুষ্ট ব্যাচের ট্যাগ নিয়ে যখন ক্লাসে বসতাম আর বকা খেতাম, মনে হতো কোন জনমের পাপ করে এই ব্যাচে ভর্তি হলাম। বিরক্ত হয়ে পরের ব্যাচে যোগদান, এমনকি পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাও করেছি অনেকবার। এখন মনে হচ্ছে, এ পথচলা যদি দিগন্তের শেষ সূর্যাস্ত পর্যন্ত মিলত! অসাধারণ কিছু বন্ধু যেমন পেয়েছি, তেমনি জানার দিগন্ত, সংস্কৃতির চর্চা, চিন্তা আর মানসিকতাও সমৃদ্ধির হয়েছে’, বলছিলেন বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাকেরুল ইসলাম আপন।

একই ব্যাচের শিক্ষার্থী মামুন চৌধুরী, সানজিদা ঋতু ও নাজিমুল হক সানিদের ভাষ্য, এমসিজে বিভাগ তাদেরকে প্রস্তুত করেছে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। এই বিভাগে প্রত্যাশার চাইতে প্রাপ্তির ভাণ্ডার ভারী। বিদায় বেদনাদায়ক হলেও সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষকবৃন্দ সবাই ভালো থাকবে। আরও এগিয়ে যাবে এমসিজে বিভাগ।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়