ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কর্মসূচিতে না যাওয়ায় বিছানাপত্র নামিয়ে দিলেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৩ জুন ২০২৩  
কর্মসূচিতে না যাওয়ায় বিছানাপত্র নামিয়ে দিলেন রাবি ছাত্রলীগ নেতা

দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার (৩ জুন)  বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত এক ছাত্রলীগ নেতা বলছেন, ‘বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি যাতে পরবর্তীকালে সে আমার কাছে আসে।’ 

অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন- শহিদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। জোনায়েদ আহমদ ৩৫১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ হোসেন প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই কক্ষে থাকেন। 

ভুক্তভোগী ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা ২টার দিকে ৩৫১ নম্বর কক্ষে আসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম। তারা সবাইকে কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকেন। কিন্তু ৫ জুন পরীক্ষা থাকায় জোবায়েদ কর্মসূচিতে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরও সবাইকে কর্মসূচিতে যেতেই হবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যান ছাত্রলীগ নেতারা। এর কিছুক্ষণ পর সেই কক্ষে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতার দুজন অনুসারী আসেন। কক্ষের সবাইকে কর্মসূচিতে যেতে বলেন। অন্যথায় হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন। 

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফের এক অনুসারীকে নিয়ে কক্ষে আসেন মাজহারুল ইসলাম। তারা দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেন। এ সময় দুজনের কেউই কক্ষে ছিলেন না। 

ভুক্তভোগী জোনায়েদ আহমদ বলেন, ‘দেখা হলেই তারা আমাকে কর্মসূচিতে যেতে বলে। কিন্তু আমি তো রাজনৈতিকভাবে হলে উঠি নাই। প্রভোস্ট স্যারই আমাকে হলে তুলেছেন। এর আগেও তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে। কিন্তু আমি কাউকে কিছু বলিনি। আজকেও তারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকে। আমি না গেলে আমার বিছানাপত্র নামিয়ে দিয়েছে।’ 

আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন বলেন, “আমি পলিটিক্যালি হলে উঠলেও এখন নন-পলিটিক্যাল ব্লকে বিভাগের সিনিয়রের সঙ্গে বেড শেয়ার করে থাকি। তারা আমাদের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য ডাকত। আজ যখন নাঈম ও মাজহার আমাদের ডাকতে আসে তখন আমি তাদের আমার পরীক্ষার কথা জানাই। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি। পরে দুজন জুনিয়র ছেলে এসে আমাদের বলে, ‘আপনাদের সবাইকে প্রোগ্রামে যেতে হবে। না হলে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে।’ পরে এসে আমার বেড নামিয়ে দিয়েছে। যদিও এই বেডটি আমার না।” 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আলী বলেন, ‘এই অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি ওই রুমে যাইনি। আর মাজহারুল গিয়েছিল কি না আমি জানি না। তবে আমি তাদের ডেকে বিষয়টি সমাধান করব।’ 

অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তারা ছাত্রলীগের মাধ্যমেই হলে উঠেছে। যারা আমাদের কর্মী তাদের আমরা কর্মসূচিতে ডাকি। স্বাভাবিকভাবেই তারা না আসলে আমরা একটু শাসন করি। এর মানে তাদের বের করে দিচ্ছি, বিষয়টি এমন নয়। বেডটা একটু নিচে নামিয়ে দিয়েছি, যাতে পরবর্তীকালে সে আমার কাছে আসে। তবে আমি তাদের জোরাজুরি করিনি। তারা যদি আমাকে বলত যে ভাই, প্রোগ্রাম-টোগ্রাম আর করব না, তাহলে আমি আর ডাকতাম না।’ 

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্র শুনলাম। খোঁজখবর নিয়ে ছাত্রলীগের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সার্বিক বিষয়ে শহিদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অভিযুক্ত মাজহারুল আমাদের হলের শিক্ষার্থী না। আমরা আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব। ভুক্তভোগীরা নিজেদের সিটেই থাকবে।’

মারুফ হোসেন/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়