ঢাকা     শুক্রবার   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৯ ১৪৩১

নবীনদের আগমনে মুখরিত তিতুমীরের আঙিনা

সাকিলা পারভীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৩ অক্টোবর ২০২৩  
নবীনদের আগমনে মুখরিত তিতুমীরের আঙিনা

‘এসো হে নবীন, বাজিয়ে সুর লহরী উল্লাসিত নব বীণ, আজ সুর মিলিয়ে গাইব জয়যাত্রার গান, আনন্দে আহ্লাদিত নবীন প্রাণ।’

উচ্চ মাধ্যমিকের পর সম্পূর্ণ নতুন মুক্ত জ্ঞানচর্চার রাজ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। তাইতো ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের মাধ্যমে বরণ করে নিয়েছে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন বিভাগ।

প্রতিবারের মতো এবারও নবীন শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটেছে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে। নবীন শিক্ষার্থীদের পাঠদান ২১ সেপ্টেম্বর শুরু হলেও, আজ ৩ অক্টোবর শহিদ বরকত মিলনায়তনে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সকাল থেকেই নবীনদের পদচারণায় মুখরিত হয় ক্যাম্পাস। এ যেন বাবা-মা, প্রিয়জনদের ছেড়ে স্বপ্ন পূরণের এক নতুন যাত্রা।

ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই নতুন শিক্ষার্থীদের ঢল বাড়তে দেখা যায়। কেউ একা এসেছেন, কেউবা আবার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তাদের বাব-মা ও কাছের মানুষদের।

তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফেরদৌস আরা বেগম নবীনবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করেন।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর ২২টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের তিতুমীর কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় অভিনন্দন জানানো হয়। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বিভাগীয় শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়। এসময় শিক্ষকদের পাশাপাশি তিতুমীর কলেজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যবৃন্দরা একে একে নবাগত শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা কলেজের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন এবং নবাগত শিক্ষার্থীদের দিক নির্দেশনা দেন।

নবীন শিক্ষার্থীদের সবার চোখে ছিল খুশির আমেজ। দীর্ঘ বারো বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং স্বপ্নের পূর্ণতা যেন খুশির আমেজকে শতগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।

নবীন শিক্ষার্থীদের আগমন ক্যাম্পাসকে যেন এক নতুন রূপ দান করেছে। দিনজুড়ে শুধু নবীনদের আনাগোনা। ক্যাম্পাসের শহিদ মিনার, বেলায়েত চত্বর, পুষ্পকানন, লাইব্রেরি ও খেলার মাঠে তাদের ঘুরতে দেখা যায়। হঠাৎ দেখা মিলে সিনিয়র এবং জুনিয়রদের মধ্যে সুন্দর একটি পরিচয়পর্ব। পাশাপাশি আড্ডা, গান, গল্প তো ছিলই।

ক্যাম্পাসে আসার অনুভূতি জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার বলেন, এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য, নির্মলতা, নির্জনতা আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। এই ক্যাম্পাসটি বরাবরই আমার কাছে একটু বেশি আবেগের। কারণ আমি চেয়েছিলাম বাসার খুব কাছাকাছি যেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাই। 

তিনি আরও যোগ করেন, তিতুমীর কলেজের সুফিয়া কামাল ছাত্রী নিবাস হলটি দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়! ভবিষ্যতে আমার স্বপ্নের ক্যাম্পাসটি শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয়; আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আরও বেশি খ্যাতি অর্জন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ভর্তিযুদ্ধ পার করার পর যখন এই ক্যাম্পাসে পড়ার সুযোগ পেলাম, তখন মনে হলো আমি সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ। তারপর ক্যাম্পাসে এসে নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু-বান্ধব, বড় ভাই-আপুদের সঙ্গে গল্প করা সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ অভিজ্ঞতা। ভালো লাগার পাশাপাশি বাসা ছেড়ে এত দূরে আসার বিষাদও কাজ করছে। সব মিলিয়ে এ এক অন্যরকম অনুভূতি যা বলে প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে এসব কলেজের একাডেমিক সকল কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজ।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ

/ফিরোজ/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়