ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাউল সম্রাটের সংগীত আজীবন প্রতিধ্বনিত হবে

পারভেজ হুসেন তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৮ অক্টোবর ২০২৩  
বাউল সম্রাটের সংগীত আজীবন প্রতিধ্বনিত হবে

বাংলা লোকসংগীতের জগতে এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব শাহ আবদুল করিম। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে অমলিন চিহ্ন রেখে গেছেন হাওর অঞ্চলের এই কৃতি পুরুষ। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার উজান ধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করা আবদুল করিমের সঙ্গীত সারা বিশ্বের লোকসংগীত প্রেমিদের প্রাণের খোরাক। তাঁর গানের গভীর কথা এবং প্রাণবন্ত সুর সময় ও স্থানকে অতিক্রম করেছে। আর তাইতো তিনি সব ছড়িয়ে রাজা; বাউল সংগীতের সম্রাট।

শাহ আবদুল করিম যেখানে বেড়ে ওঠেন সেখানে সঙ্গীত ছিল দৈনন্দিন জীবনের একটি অন্তর্নিহিত অংশ। পিতা ইব্রাহিম সরদার ছিলেন একজন দক্ষ ঢোল বাদক এবং বাউল দর্শনের ভক্ত, যা তাঁর জীবনের অতীন্দ্রিয় দিকগুলির উপর জোর দেয়। জীবনের প্রথম দিকের প্রভাবগুলি শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীতযাত্রাকে গভীরভাবে সমৃদ্ধ করেছে।

তিনি ছিলেন একজন স্ব-শিক্ষিত সঙ্গীতজ্ঞ। দোতারা বাজিয়ে গান গাওয়া তাঁর নিজস্ব শৈলী। তাছাড়াও ভাটিয়ালী ও বাউলিয়ানা সঙ্গীতের পরশ তাঁর হৃদয়ে দিয়ে গেছে ছোঁয়া। তিনি একজন শিল্পী হিসাবে বহুমুখীতা প্রমাণ করেছেন সর্বসর্বে। তাই তো তিনি সর্বজন গৃহীত এক সঙ্গীতজ্ঞ।  সিলেটী ভাষায় রচিত তাঁর গানগুলো প্রেম ও আকাঙ্ক্ষা থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিকতা এবং সামাজিকতা পর্যন্ত বিভিন্ন আবেগকে স্পর্শ করেছে।

বাউল সঙ্গীত বাংলার অতীন্দ্রিয় ঐতিহ্যের গভীরে থাকা একটি ধারা। এটি সঙ্গীত এবং কবিতার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক আলোকিতকরণ এবং ঐশ্বরিক সাথে সংযোগের সন্ধান উদযাপন করে। শাহ আবদুল করিমের রচনাগুলি এই মূল নীতিগুলিকে মূর্ত করেছে, যা তাকে বাউল ঐতিহ্যের একজন খাঁটি প্রতিনিধি করে তুলেছে; দিয়েছে সম্রাট স্বীকৃতি।

শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত শুধু আধ্যাত্মিকতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি মানুষের মনে বিচরণ করেছেন তাঁর গানে। তাঁর গানগুলি প্রায়ই একতা, ভালবাসা এবং সহানুভূতির বার্তা বহন করে, যা শ্রোতাদের মনে কিংবা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে গভীর প্রাসঙ্গিক করে তোলে।

কালজয়ী এই সংগীতজ্ঞের সুরের নিপুণতায় অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে একুশে পদক (২০০১), কথা সাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরি পদক (২০০০), রাগীব-রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার (২০০০), লেবাক এ্যাওয়ার্ড (২০০৩), মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০০৪), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা (২০০৫), বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি সম্মাননা (২০০৬), খান বাহাদুর এহিয়া পদক (২০০৮), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী সম্মাননা (২০০৮), হাতিল এ্যাওয়ার্ড (২০০৯) ও এনসিসি ব্যাংক এনএ সম্মাননা (২০০৯)-সহ আরও অনেক সম্মাননা।

বাউল সংগীতের এই সম্রাট ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করলেও তাঁর উত্তরাধিকার বেঁচে আছে অগণিত শিল্পীর মাধ্যমে।

তাঁর কালজয়ী রচনাগুলি বাউল সঙ্গীতের জ্বলন্ত শিখাকে জীবন্ত রেখে সমস্ত বয়সের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এবং অনুরণিত করে। যখন আমরা এই সঙ্গীতশিল্পীর জীবনকে জানি ও কাজ উদযাপন করি, তখন আমাদের আত্মাকে স্পর্শ করার এবং সাধারণ ও ঐশ্বরিকের মধ্যে ব্যবধান দূর করার জন্য সঙ্গীতের স্থায়ী শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

যারা গানের সার্বজনীন ভাষার মাধ্যমে সান্ত্বনা, অনুপ্রেরণা এবং মানবিক অভিজ্ঞতার সৌন্দর্য খোঁজেন, যারা বাংলা সংস্কৃতি ও গানে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পান, তাদের হৃদয়ে শাহ আবদুল করিমের সঙ্গীত চিরকাল প্রতিধ্বনিত হবে। মিশে থাকবে বাউল সম্রাটের নাম।

লেখক: কবি ও শিশুসাহিত্যিক, শিক্ষার্থী, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়