ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

বহিষ্কার হয়েও হলে থাকছেন রাবির দুই ছাত্রলীগ নেতা

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ২১ নভেম্বর ২০২৩  
বহিষ্কার হয়েও হলে থাকছেন রাবির দুই ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে কৃষ্ণ রায় নামে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করার অভিযোগে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা নাঈম আলী ও মো. সোলাইমানকে। হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থী ও বহিষ্কার হওয়ার পরও এই দুই ছাত্রলীগ নেতা দাপটের সঙ্গেই হলে থাকছেন বলে জানা গেছে।

নাঈম ইসলাম হলের দুই শয্যাবিশিষ্ট একটি কক্ষ একাই দখল করে রেখেছেন। অন্যদিকে সোলাইমান এক শয্যাবিশিষ্ট কক্ষে থাকছেন। তবে এ ব্যাপারে হল প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

নাঈম আলী সদ্য ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আর মো. সোলাইমান ওই হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

জানা যায়, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে মারধর ও ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ও সোলাইমানের বিরুদ্ধে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী কৃষ্ণ রায়। পরেরদিন ওই ঘটনায় তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। ১২ দিন পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।

তাদের বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন অভিযোগ পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে ওই দুই নেতাকে আর কখনো হলে আবাসিকতা প্রদান না করা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়। সেখানে তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কার ও অনাবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ায় অতিদ্রুত হল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছিল।

কিন্তু সিন্ডিকেট সভায় সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাদের শুধু হল থেকে অপসারণ ও সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ২৮ দিন পরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তারা এখনো হলেই অবস্থান করছেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলের দুই শয্যাবিশিষ্ট ৩৭৬ নম্বর কক্ষ একাই দখল করে রেখেছেন নাঈম আলী। তিনি বর্তমানে নগরের দাসমারী এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকেন। তবে মাঝে মধ্যে এসে হলেও থাকেন। আরেক নেতা মো. সোলাইমান এক শয্যাবিশিষ্ট ৩৭৪ নম্বর কক্ষে থাকছেন। তারা হলে নিয়মিত ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

গত ১২ নভেম্বর নাঈম আলীর অনুসারী কয়েকজন হলের প্রতিটি কক্ষে গিয়ে আসন দখলের নামে ‘রুম ওয়ার্ক’ কার্যক্রম চালিয়েছেন। এছাড়াও নাঈম আলীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলে সিট দখল, বৈধ শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামতে বাধ্য করা, হলের সিট বরাদ্দের সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণে বাধা দেওয়াসহ নানা অনৈতিক কাজে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে।

হলের কক্ষ দখল করে থাকার বিষয়ে নাঈম আলী বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো নোটিশ পাইনি। আর আমি এখন হলেও থাকছি না। কক্ষটিতে তাঁর কয়েকজন অনুসারীরা থাকে বলে জানান তিনি।

হলে অবস্থান করার বিষয়ে মো. সোলাইমান বলেন, আমি অফিসিয়ালি এখনো কোনো নোটিশ পাইনি। যার কারণে হলেই আছি। কোনো নির্দেশনা আসলে তারপর ব্যবস্থা নেব।

জানতে চাইলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্যাতনের সত্যতা পেয়ে হল প্রশাসন ও শৃঙ্খলা কমিটি যে সুপারিশ করেছিল সেটি সিন্ডিকেটে বহাল রাখা হয়নি। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তটি তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাননি । আজকে হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ২৮ নভেম্বরের মধ্যে হল ত্যাগ করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা কক্ষ ত্যাগ না করলে অভিযান চালিয়ে কক্ষ সিলগালা করা হবে জানান তিনি।

/শাকিবুল/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়