রাবি ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সিট দখলের অভিযোগ
রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলে মধ্যরাতে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করায় গত ২৬ নভেম্বর সাংবাদিকসহ শিক্ষার্থীকে মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল-আমিন আকাশ ২১১ নং কক্ষে দুজনের সিট একাই দখল করে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে তার অনুসারী আমির হামজা ও নাজিম হবিবুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও ক্ষমতাবলে ২০৮ নং রুম দখল করে আছেন।
তাদের দাবি, হল প্রাধ্যক্ষের সহায়তায় কিছুদিনের জন্য হলে অতিথি হিসেবে থাকছেন। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম।
হল সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার করতে কক্ষ দখলে নিয়ে আবাসিক হলে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী রাখেন ছাত্রলীগ নেতা আকাশ। তিনি হলের ২০৫ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী হলেও পরবর্তীতে কক্ষ পরিবর্তন করে ২১১ নম্বর কক্ষে যান। এই কক্ষের আবাসিক ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের রকি মণ্ডল এবং পরিসংখ্যান বিভাগের কিরণ রবি দাস। পরে কিরণ দাস ২০৫ ও রকি ২০৬ নং কক্ষে গেলে ২১১ নং কক্ষ একাই দখলে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন আকাশ।
এছাড়া প্রভাব খাটিয়ে ২০৮ নম্বর কক্ষও দখল নিয়ে তার অনুসারী আমির হামজা ও নাজিমকে রাখেন তিনি। তারা কেউ ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নন। আমির হামজা শহীদ শামসুজ্জোহা হল এবং নাজিম নবাব আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাছাড়া ২১৬ নং কক্ষের সম্রাট ও ইমরান ওই সিটের আবাসিক শিক্ষার্থী নন।
এদিকে সিট ফাঁকা না থাকায় বরাদ্দ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী হলে ওঠতে না পেরে ভোগান্তিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন হাসান জানান, প্রায় গত দুই মাস আগে হলে আবাসিকতা পেলেও সিট ফাঁকা না থাকায় হলে ওঠতে পারছি না। কবে সিট ফাঁকা হবে সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রতি মাসে ঠিকই সিট ভাড়া দিতে হচ্ছে।
অন্য হলের হয়েও হবিবুর হলে থাকার কারণ জানতে চাইলে আমির হামজা বলেন, তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলে এখনও উঠেননি। তবে নিজের আর্থিক সমস্যার কারণে শহীদ হবিবুর রহমান হলে নিজ বিভাগের এক ভাইয়ের কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করছেন। হল প্রাধ্যক্ষ তাকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিলে তিনি বের হয়ে যাবেন।
হলে অবৈধভাবে থাকা নাজিম বলেন, তিনি নবাব আব্দুল লতিফ হলে উঠেছিলেন। কিন্তু হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার কাছে অর্থ দাবি করায় তিনি তার বন্ধু হামজার পরামর্শক্রমে হবিবুর রহমান হলে এসে আপাতত থাকছেন।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা আল-আমিন আকাশ বলেন, কক্ষে আমিসহ আরেকজন থাকি। তবে তিনি কম থাকেন। ২০৮ নং রুমে তার অনুসারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এই হলের না হলেও ওই রুমটি জিহাদের নামে আছে। তারা অতিথি হিসেবে থাকছেন। এ বিষয়টি নিয়ে স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে।
হলে সিট দখল ও অন্য হলের শিক্ষার্থী হবিবুর হলে কিভাবে থাকছেন- জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি এই হলে অবস্থানরত অন্য হলের শিক্ষার্থীদের বের হয়ে যেতে এর আগে নোটিশ দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে বিশ্বদ্যিালয় প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করব। ২০৮ কক্ষে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কয়েকদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অন্য হলের কাউকে হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর মধ্য রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের ২১৬ নম্বর কক্ষে উচ্চশব্দে গানবাজনা ও হইহুল্লোড় করছিলেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আল-আমিন আকাশ ও তার অনুসারীরা। সাউন্ড বন্ধের জন্য অনুরোধ করতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করেন তারা। এ বিষয়ে নিউজ সংগ্রহের কাজে গেলে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রায়হান ইসলামকেও মারধর করেন তারা।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। তদন্ত শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেন কমিটির আহ্বায়ক শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ড. গৌতম দত্ত।
তিনি জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি৷
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত প্রতিবেদনে পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
/বিজয়/মেহেদী/