ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাবির মুহসিন হল
ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
![ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাবির মুহসিন হল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাবির মুহসিন হল](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023November/DU-News-2312021413.jpg)
দেশে ঘটে যাওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের বিভিন্ন জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫মিনিটে ৫ দশমিক ৫ রিখটার স্কেলে হওয়া ভূমিকম্পে ঢাবির ওই হলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, হলের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং ভেঙে পড়েছে রিডিংরমের দরজার গ্লাস। এদিকে ভূমিকম্প শুরু হলে সবাই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে হলের তৃতীয় তলা থেকে এক শিক্ষার্থী লাফিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। তবে ওই শিক্ষার্থীর নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে সূর্যসেন হলের দোতলা থেকে দুজন শিক্ষার্থী লাফিয়ে পড়েন। তারা হলেন- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজুর রহমান এবং ভূগোল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদ। দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ার ফলে মিনহাজের পা ভেঙে যায় এবং পারভেজের পা মচকে যায়। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলটি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায়ই হলটির ইট-সিমেন্টের পলেস্তারা খসে পড়ে। বেশ কয়েক স্থানে ছাদের ঢালাইয়ের ভেতরে থাকা রডও এখন দেখা যায়। অতীতে সিলিংয়ে লাগানো ফ্যানও হঠাৎ খুলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে হলটিতে। এখানে পলেস্তারা খসে পড়াসহ যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে শিক্ষার্থীদের। এর জন্য হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতার সমালোচনা করছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাবির অরণ্য আরিফ নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, মল চত্বরে ২০ কোটি টাকা খরচ করে মাটি ঢেকে ঘাসের উপর কংক্রিট বসানো হচ্ছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল ট্রাজেডি দিবস পালন করে। এরপর একসঙ্গে মুহসিন হল ট্রাজেডি দিবস, সূর্যসেন হল ট্রাজেডি দিবস অন্যান্য হল ট্রাজেডি দিবস পালন করবে।
তাওহীদুল ইসলাম সোহান নামের শিক্ষার্থী বলেন, আল্লাহ এবারের মত বাঁচিয়ে দিলো। এত বড় ভূমিকম্প জীবনে দেখিনি। বিপদে মানুষের হুশ থাকে না, সেটা আজ দেখলাম। জীবন বাঁচানোর জন্য সবার ছোটাছুটি। ৪-৫ তলা থেকে তো ভাইয়েরা লাফ দিতে গেছিলো। পরবর্তীতে ভূমিকম্প হলে ঢাবির মুহসিন হল শেষ, আমরাও শেষ।
পলেস্তারা পড়ে যাওয়া ৩৩০ নং রুমের শিক্ষার্থী মোঃ আমিনুর ইসলাম বলেন, আল্লাহর রহমতে এখনও অক্ষত আছি। এমন রুমে বসবাস করা মানেই সংবাদের শিরোনাম হওয়ার অপেক্ষা।
শিক্ষার্থী হেলালুর রহমান বলেন, আপনি কি কখনো স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারেন এমন একটা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বসবাস করে? একটা ছয় তলা ভবনের এমন কোনো ফ্লোর নেই, যেখানে সিমেন্ট খসে পড়ে বের হওয়া মরিচা ধরা জীর্ণ রড দেখা যায় না। এই হল থেকে কত শিক্ষক, নেতা, সচিব, সাংবাদিক, বিজনেসম্যান বের হয়েছে। তাদের কারো কাছে কি এই পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো তথ্য কখনই যায়নি? অবশ্যই গিয়েছে। কিন্তু তাদের এতে কিছুই যায় আসে না। কারণ তাদের ভাই, সন্তান কেউই এসব ভবনের দশ কিলোমিটারের মধ্যেও কখনো আসে না।
তিনি বলেন, যদি বলেন শিক্ষক কিংবা মোটাদাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসব জানে না। তাহলে আমার প্রশ্ন, তাদের ছাত্ররা কোথায় থাকে, কিভাবে থাকে- এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখা কি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? প্রতিটি হলে কি হাউজ টিউটর নেই? তাদের আসলে কাজটা কি?
জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, আমাদের হলের অবকাঠামো একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাকে আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তার দেখিয়েছি। শিক্ষার্থীরা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। ফলে রিডিং রুম থেকে বের হওয়ার সময় দরজার কাচ ভেঙে যায়।
তিনি বলেন, আগেরবারের ভূমিকম্পে আমাদের হলের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তখন বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে দুর্বল স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংস্কার করা হয়েছিলো। নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে আমরা অনেকবার উপর মহলে কথা বলেছি। তবে মেগা প্রজেক্ট পাশ হলে আমরা নতুন ভবন নির্মাণ করতে পারবো।
/মেহেদী/
আরো পড়ুন