ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ভোজ্য তেল সংকট কমাতে পাম চাষের ভূমিকা

মো. সোহান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৪:৪৪, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
ভোজ্য তেল সংকট কমাতে পাম চাষের ভূমিকা

পাম গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। একটানা ৬০-৭০ বছর ফল দিয়ে থাকে। বছরে ৮-১০টি কাঁদি আহরণ করা যায়। একটি কাঁদিও ওজন ৪০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। ঝড় জলোচ্ছাসে এই গাছ সহজে ক্ষতি হয় না। পাম গাছ অনান্য গাছ থেকে ১০ গুণ বেশি অক্সিজেন দেয়। এছাড়া পাম জল, পাম সিরাপ, পাম চিনি ইত্যাদি তৈরি হয়।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের জন্য নানা ধরনের তেল জাতীয় ফসল চাষ করা হয়। তবে তেল জাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো সরিষা। এ ছাড়া দেশে সূর্যমুখী, তিল, চীনা বাদাম, তিসি, কুসুম ফুল, সয়াবিন ইত্যাদি চাষাবাদ হয়ে থাকে।

এক সময় সরিষার তেল দিয়েই ভোজ্য তেলের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হতো। সরিষার তেল  বাঙালির ঐতিহ্যের একটা অংশও। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা জন্য এখন সয়াবিন তেল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে ৬.১০৬ হেক্টর জমিতে ৮.২৪৩ লাখ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদিত হয়েছে। অপরদিকে চীনা বাদাম ০.৯৫ লাখ হেক্টর জমিতে ১.৭১ লাখ মেট্রিক টন, তিল ০.৬৫১ লাখ হেক্টর জমিতে ০.৭৭১ লাখ মেট্রিক টন, সয়াবিন ০.৭৯১ লাখ হেক্টর জমিতে ১.৪২২ লাখ মেট্রিক টন, সূর্যমুখী ০.০৯২ লাখ হেক্টর জমিতে ০.১৬ লাখ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য  তেলজাতীয় ফসল ০.০১২ এবং ০.০১৪ লাখ মেট্রিক টন। যা থেকে দেখা যায় যে, সরিষা বাংলাদেশের প্রধান তেলজাতীয় ফসল।

বাংলাদেশে বর্তমানে জনপ্রতি মাথাপিছু ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ১২ কেজি। তবে এটি বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। যেমন- উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষের মাথাপিছু ভোজ্য তেলের চাহিদা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের তুলনায় বেশি।

বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ কোটি। তাই ২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশের জনপ্রতি মাথাপিছু ভোজ্য তেলের চাহিদা ছিলো প্রায় ১২ কেজি।

বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে মোট ভোজ্য তেলের উৎপাদন ছিল প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। তাই, উৎপাদন থেকে চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। এই পরিমাণ তেলের মোট মূল্য ছিল প্রায় ১৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের পাম চাষ একটি সম্ভাবনাময় ভোজ্য তেলের উৎস। বাংলাদেশের বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি অঞ্চলে বর্তমানে পাম চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশের এই অঞ্চলগুলোতে পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় দিন দিন আরও জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

এক গবেষণায় দেখা যায়,‌ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাম চাষ করা হয়। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১.৫ লাখ মেট্রিক টন পাম ফল উৎপাদিত হয়। যা থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাম তেল উৎপাদিত হয়।

বাংলাদেশের বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে । কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে পাম চাষ সম্ভব হচ্ছে না । বাংলাদেশে বেশিরভাগ কৃষক স্বল্পশিক্ষিত। নতুন কোনো কিছুর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া এটা তাদের জন্য অনেক কঠিন। যেহেতু পাম একটি নতুন ভোজ্য তেলের উৎস, তাই এ ব্যাপারে বেশিরভাগ কৃষকের রয়েছে স্বল্প ধারণা। আবার কারো কারো কাছে একেবারেই অজানা।

বাংলাদেশের বর্তমানে পাম চাষ করা গেলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাম ফল থেকে তেল উৎপাদনকারী যন্ত্র নিয়ে। বাংলাদেশের সব অঞ্চল মিলে বর্তমানে খুব স্বল্প পরিমাণে পাম চাষ করা হচ্ছে। যার কারণে দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাম ফল থেকে তেল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখাচ্ছে।

যদি সরকার সহজ কিস্তিতে অথবা সরকারি কোনো মাধ্যমে পাম ফল থেকে তেল সংগ্রহের যন্ত্র কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিত, তাহলে বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে পাম চাষের সম্ভাবনা আরও অনেক গুণ বেড়ে যেত। একই সঙ্গে বাংলাদেশে প্রতি বছর যে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করতে হয়, তার পরিমাণও কমে অনেক নিচে নেমে আসতো এবং দেশের  মুদ্রা দেশেই ব্যবহার করা যেত। জিডিপিতে বাড়তো কৃষি খাতের আয়, যা দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,‌ কুষ্টিয়া।

/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়