অবরোধ-মানববন্ধনসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কর্মসূচি অব্যহত
ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
দেশব্যাপী নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের নানা কর্মসূচি অব্যহত রয়েছে। সোমবার (১০ মার্চ) সকাল থেকেই তারা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেন। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)
ধর্ষকদের ফাঁসি এবং দেশে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানিয়ে সোমাবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তির দাবি করে।
সকাল ১১ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলা, কার্জন হল এরিয়া, শহীদ মিনার প্রভৃতি স্থানে এসব বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ শিক্ষার্থীদের ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’, ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’, ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাসি দে’, ‘We want we want, Justice Justice’, ‘we want Justice, hang the rapist’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাই নাই’, ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
সমাবেশে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের সব অধিকার চাই, আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। রাস্তা ঘাটে চলার সময় চিন্তা করি, কে আমাদেরকে টিজ করছে। আমরা এসব চিন্তা না করে নিরাপদে থাকতে চাই।
বিক্ষোভ সমাবেশ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার বলেন, “আমিও একজন আছিয়া।আমারও তো নিরাপত্তা নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নারী শিক্ষার্থীই তো নিরাপদ নয়। যারা ধর্ষক তাদের শুধু ফাঁসি দিলে হবে না, ফাঁসি দিলে আমরা দেখতে পারি না। যত দ্রত সম্ভব ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি দিতে হবে, যেমনটা হয় মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে।” ক্লাস বর্জনের ফলে পড়াশোনার গতি থেমে যাওয়া শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি ধর্ষণ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা দ্রুত সমাধান করার আহ্বান জানান।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট ভূগোল ও পরিবেশ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুইরেন্স, ফার্মেসী, ম্যানেজমেন্ট, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, পরিসংখ্যান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রাণিবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিভাগ ও অনুষদ বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)
ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবিতে আবারো ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দলে দলে প্যারিস রোডে জড়ো হতে শুরু করেন। এরপর সেখান থেকে বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা। এ সময় তালাইমারি থেকে একদল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মেইন গেটে যোগদান করেন।
এ সময় তারা ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে জবাই কর’, ‘উই ওয়ান্ট যাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘খুনি কেন বাহিরে, ইনটেরিম জবাব চাই’, ‘রাবির অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশান’, ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’, ‘আমার মায়ের কান্না, আর না আর না’, ‘তুমি কে আমি কে? আছিয়া আছিয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
২ ঘন্টা পর বেলা ১টার দিকে আগামীকাল মঙ্গলবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি ঘোষণা করেন স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব।
তিনি বলেন, “আগামীকাল আমরা চোখে কাপড় বেঁধে ফেসবুকে শেয়ার ও ‘উই ওয়ান্ট যাস্টিস নো মোর রেপিস্ট’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করবো।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
দেশব্যাপী নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহীদ মিনারের পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক হুমায়ুন হাবিব হিরণের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর. আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মৌসুমী আফরোজ, বৈশাখী।
অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক, যুগ্ম আহ্বায়ক জর্জিস মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সাবেক সভাপতি নবীনূর নবীন, মুরাদ হাসান, আব্দুল গাফফার প্রমুখ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইবি শাখা ছাত্রদল।
এসময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমী মিথুনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব, আনারুল ইসলাম, মনিরুল হক, সদস্য সাব্বির, রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিন, সৌরভ, উল্লাস, মুক্তাদির, সাক্ষর প্রমুখ কর্মীরা।
মানববন্ধনে তাদের হাতে ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘জাস্টিস ফর আছিয়া, আছিয়া আছিয়া’, ‘তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’, ‘মাগুরায় ধর্ষণকাণ্ডের অভিযুক্তদের ফাসি চাই’, ‘ধর্ষণের বিচার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক’ বিভিন্ন প্লাকার্ড দেখা যায়।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
দুপুর ২ টার দিকে ধর্ষক ও নারী নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ সময় তারা ‘তুমি কে, আমি কে? আছিয়া আছিয়া’, ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মানববন্ধনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এই পর্যন্ত যত ধর্ষণ হয়েছে কোনটিরই সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। তাই এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আছিয়ার সুষ্ঠু বিচার চাই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আছিয়ার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)
দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে দেশব্যাপী নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শাবিপ্রবি শিক্ষকরা। মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষক।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি নিরোধ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবিনা ইসলাম এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো এবং আইনের কঠোর প্রয়োগেরও আহ্বান জানান।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)
দুপুর ১টার দিকে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মিছিল ও মানববন্ধন করেছে হাবিপ্রবি ছাত্রদল।
তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াজেদ ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে মানববন্ধন করে।
এ কর্মসূচি থেকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে ধর্ষণকারীর যেন দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে দেশের আইনশৃংখলায় নিয়োজিত ব্যাক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দেশব্যাপী নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন বাকৃবির নারী শিক্ষার্থীরা। মিছিলে নারীদের প্রতি সহিংসতার অবসান এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
নারী শিক্ষার্থীরা কেআর মার্কেটে থেকে মশাল মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন সড়ক, আব্দুল জব্বার মোড় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে এসে সমাবেশ করেন।
এর আগে, বিকেলে দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে বাকৃবি শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে তারা।
ঢাকা/মেহেদী