ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মেয়াদ শেষেও আওয়ামীপন্থি ডিনদের বহাল; রাকসু জিএসের হুঁশিয়ারি

রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৮:৪১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
মেয়াদ শেষেও আওয়ামীপন্থি ডিনদের বহাল; রাকসু জিএসের হুঁশিয়ারি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ১২জন ডিনের মেয়াদ গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) শেষ হয়েছে। তাদের মধ্যে আওয়ামীপন্থি ডিন রয়েছে ৬জন। তবে, নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবের সিদ্ধান্তে এই সময় বর্ধিত করা হলেও বিষয়টি ঘিরে ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে বিতর্ক ও উত্তেজনা।

২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে ১২টি অনুষদের মধ্যে ৬টিতে জয়লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, হলুদ প্যানেল। জয়ী অনুষদগুলো হলো আইন, বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং ভূ-বিজ্ঞান।

আরো পড়ুন:

হলুদ প্যানেল থেকে আইন অনুষদে আইন বিভাগের আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদে গণিত বিভাগের ড. নাসিমা আখতার, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এস. এম. কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস. এম. একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ. এইচ. এম. সেলিম রেজা ডিন হিসেবে নির্বাচিত হন।

আওয়ামীপন্থি ডিনদের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জেষ্ঠ্য শিক্ষক বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনার পর পরই যদি সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার স্বদিচ্ছা থাকত, তাহলে প্রথম ও জরুরি পদক্ষেপ হওয়া উচিত ছিল আওয়ামীপন্থি ডিনদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া। কারণ ডিন পদটি কেবল প্রশাসনিক নয়; এটি একদিকে একাডেমিক নীতি-নির্ধারণে প্রভাবশালী, অন্য দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর নৈতিক ও আদর্শিক প্রভাব বিস্তারকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান।”

তিনি আরো বলেন, “বাস্তবে দেখা গেছে তাদের শুধু দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি তো দেওয়া হয়নি, বরং স্বপদে বহাল তবিয়তেই রাখা হয়েছে। আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো, তাদের আইনগত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কোনো ব্যাখ্যা বা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়াই আবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কোন যুক্তিতে মেয়াদ বাড়ানো হলো? জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষের শক্তিকে কেন বার বার এভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হচ্ছে? জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের কোনো শিক্ষক কি রাবিতে নেই?
এদিকে, রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তার ফেসবুক পোস্টে হুঁশিয়ার দিয়ে জানান, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী ডিনদের অপসারণ করানো হয়নাই। নির্বাচিত বলে পুরো দেড় বছর স্টে করাইছেন প্রশাসন। গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) ডিনদের মেয়াদ শেষ হইছে, শুনেছি এই ডিনদের আবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।

তিনি লিখেছেন, “আমার আল্টিমেটাম আমি ফিলাপ করে তারপর ছাড়ি এটা প্রশাসন ভালোমতো জানেন। আজ সময় দিলাম রিজাইন দেওয়ার জন্য সম্মানের সাথে। আওয়ামীপন্থী ডিনরা আগামীকাল ডিন অফিসের চেয়ারে দেখলে অফিসে গিয়ে বাকিটা বুঝিয়ে দিবো। নমনীয়তা আমাদের জন্য কাল হয়ে গেছে, আগামীকাল আল্লাহর ওয়াস্তে কোনো শিক্ষার্থীকে যেনো না দেখি এদের পক্ষ নিতে। তাদের পদত্যাগের সময় দিলাম এই কর্মদিবস। সাথে সাথে রাবিয়ানদের অনুরোধ জানাবো আগামীকাল রাকসু ভবনের সামনে সকাল ১০টায় চলে আসবেন।"

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসঊদ বলেন, “যেহেতু গত ১ বছর পর্যন্ত তাদেরকে রাখলাম, রাখার একটা কারণ হচ্ছে তারা নির্বাচিত ডিন। তাছাড়া, আমরা কিছুটা নিরুপায় হয়ে তাদেরকে রাখতে হচ্ছে। কারণ ১৭ তারিখ রাবিতে সমাবর্তন ছিলো। ১ মাস পরে আবার ভর্তি পরীক্ষা। তাই এখন ডিন নির্বাচন দিলে সেটা ভর্তি পরীক্ষার উপর প্রভাব ফেলবে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদেরকে যেহেতু ১ বছর রাখছি আর একমাস রাখলে সেটা সেরকম কিছু না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, "এটা ১৯৭৩ অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিচালিত একটা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী তাদেরকে সরিয়ে শুধু ভিসি স্যারই দায়িত্ব পালন করার ইখতেয়ার রাখেন। এর আগে, করোনার সময়ে রাবিতে ডিনদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদেরকেই মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।”

তিনি আরো বলেন, “এমনিতেই ভিসি স্যারের কাজের যে লোড এতগুলো দায়িত্ব একসাথে পালন করলে তার উপর সেটা অতিরিক্ত চাপ হয়ে যাবে। তাই তাদেরকে রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তারা সিন্ডিকেট মিটিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে অংশগ্রহন করতে পারবেন না।

ঢাকা/ফাহিম/জান্নাত

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়