আমার মা, আমার পৃথিবী
আইনুল হক || রাইজিংবিডি.কম
আমার মা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। এই ভালোবাসা কখনো রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, অসুস্থতার সময়ে কখনো রাত জেগে আমার পাশ ঘেঁষে বসে থাকা, কখনো আবার না খেয়ে আমার পাতে তুলে দেওয়া শেষ মাছ কিংবা মুরগির টুকরো।
যেদিন আমি পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেলাম, সেদিন সবার আগে আমার মায়ের চোখে আনন্দের অশ্রু দেখেছিলাম। বিদায় নেওয়ার সময় দেখি, ছোট ছোট পুটলি করে নানারকম খাবার গুছিয়ে দিচ্ছেন। যেন একটুও কষ্ট না পাই। আমি তখন বুঝি, মা তার ভালোবাসাকে পুটলিতে ভরে আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
বাসায় আমি না থাকলেও, আমার কথা নিয়মিত আলোচনা হয়। মায়ের প্রতিটি দোয়ার মাঝে আমার নাম থাকে। আমি জানি, মায়ের সেই দোয়া আর চোখের জলের শক্তিতেই আজ আমি এই দূর শহরে, একটি স্বপ্নের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি।
আমার মা সুপার হিরো। তবে তার কোনো রঙিন ক্যাপ নেই, নেই কোনো আলো ঝলমলে পরিচিতি। তিনি নীরবে, নিভৃতে সংগ্রাম করেন। অনেক সময় তিনি নিজের পছন্দের কিছু কেনেন না, সেই টাকা জমিয়ে রাখেন আমাদের জন্য। যেন সময় মত আমাদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারেন, নতুন জামা কিনে দিতে পারেন।
তিনি নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত থাকেন। তার জীবনে নিজের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নেই—আছে শুধু আমাদের হাসিমুখ দেখার তৃষ্ণা।
আমার মা শুধু মা নন, তিনিই আমার প্রথম শিক্ষক। আমি আজ আমার মায়ের শিক্ষার জন্যই একজন গর্বিত সন্তান। তিনি আমাকে শিখিয়েছেন—ভালো কাজকে ভালোবাসতে হবে, খারাপকে ঘৃণা করতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের পথ ধরেই এগোতে হবে জীবনে।
ছোটবেলায় যখন আমি কেঁদে উঠতাম, মা সব কাজ ফেলে আমার কাছে ছুটে আসতেন। জ্বর হলে রাত জেগে মাথায় পানি দেন, হাত বুলিয়ে দেন পিঠে। এখন ফোনে যদি শোনেন আমি অসুস্থ, তাহলে প্রতিনিয়ত কল দিয়ে খোঁজ নেন। আমার প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতেই তিনি না ঘুমিয়ে দোয়া করেছেন।
যখন বাড়িতে কোনো সমস্যা আসে, মা সবার আগে শক্ত হয়ে দাঁড়ান। অন্যরা কাঁপলেও, মা নিজের চোখের জল লুকিয়ে সবাইকে সাহস দেন। তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করেন, কিন্তু তার চিন্তা-ভাবনা অসাধারণ। তিনি কখনো আমাদের অন্যের চেয়ে বড় হতে বলেন না। বলেন- শুধু যেন ভালো মানুষ হই।
আমার প্রতিটি সাফল্যের পেছনে, প্রতিটি পদক্ষেপের নিচে মায়ের আত্মত্যাগ আর ভালোবাসার ছায়া লেগে আছে। মা আমার কাছে কোনো এক দিনের ভালোবাসা নন—তিনি আমার প্রতিটি শ্বাসের মতো, প্রতিটি সকাল-সন্ধ্যার মতো কাছের।
পৃথিবীর সব মা যেন তাদের ছেলেমেয়েদের সফলতা দেখে যেতে পারেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, তৃতীয় বর্ষ, কৃষি অনুষদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা/মেহেদী