১৯ মাসে ইবির ক্লাব ভাড়া বকেয়া প্রায় ৭ লাখ টাকা, গাফিলতির অভিযোগ
ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাব হিসেবে কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারা তলার দ্বিতলবিশিষ্ট একটি ভবনকে ব্যবহার করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।। তবে গত ১৯ মাসে ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ভাড়া বকেয়া রয়েছে ক্লাবটির।
ভাড়া পরিশোধের জন্য তিন দফায় ইবি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পায়নি মালিক পক্ষ। মূল ফাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হারিয়ে যাওয়ায় ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর ৩ বছরের জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে ক্লাবের ভাড়া চুক্তি নবায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে মাসিক ভাড়া নির্ধারণ হয় ৩৬ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। চুক্তি নবায়নের পর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৯ মাসের ভাড়া পরিশোধ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর আর কোনা ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। দীর্ঘদিন ভাড়া পরিশাধ না করায় গত ৫ ডিসেম্বর ভাড়া চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর চিঠি দেয় মালিক পক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস থেকে ভাড়া চুক্তির মূল ফাইলটি হারিয়ে গেছে। এ কারণে তাগাদার চিঠি পাওয়ার পর মালিক পক্ষের কাছ থেকে চুক্তিপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে তারা। ফটোকপি ও চিঠি সংযুক্ত করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাড়া পরিশোধের অনুমোদন চেয়ে অর্থ ও হিসাব শাখায় ফাইল পাঠানো হয়। মূল ফাইল না থাকার অজুহাতে সেটি প্রায় ৪ মাস ওই শাখায় পড়ে থাকে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে কোনো কর্মকর্তাই ফাইলের খোঁজ নেননি। গত ৫ মে তৃতীয় দফায় মালিক পক্ষ চিঠি দিলে সেই ফাইল খুঁজে বের করা হয়।
এ বিষয় গত ১৭ মে এস্টেট অফিসের প্রধান আলাউদ্দিন বলেন, “মূল ফাইল না থাকায় মালিক পক্ষ থেকে কাগজপত্রের ফটোকপি নিয়ে নতুন ফাইল তৈরি করে হিসাব শাখায় পাঠিয়েছিলাম। তবে মূল ফাইল না থাকায় একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন যে মাসগুলো অতিবাহিত হয়েছে সেগুলো যুক্ত করে দুয়েকদিনের মধ্যে পুনরায় হিসাব শাখায় পাঠাবো।”
তবে তার এই বক্তব্যের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ফাইলটি একই অবস্থায় হিসাব শাখায় পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
মূল ফাইল হারানোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আগে দায়িত্ব পালনকারীদের গাফিলতির ফলে এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আর দায়িত্ব শেষে আগের প্রধান কিছু বুঝিয়েও দেননি।”
এ বিষয়ে সাবেক এস্টেট সাবেক প্রধান শামসুল ইসলাম দায় অস্বীকার করে বলেন, “ফাইল তো থাকার কথা, হারাবে কেন? আগে আমরা ঠিকমতা ভাড়া পরিশোধ করেছি, কোনো সমস্যা হয়নি। তারাই তো আমার থেকে সবকিছু বুঝে নেয়নি।”
এদিকে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক আনার পাশা বলেন, “মূল ফাইল না থাকলে পূর্বের পেমেন্ট যাচাই করা যায় না। এছাড়া চুক্তির ফটোকপি গ্রহণীয় নয়। তাই বিল অনুমোদন সম্ভব হয়নি। এসব জটিলতার কারণেই তখন ফাইলটি পড়ে ছিল।”
এ বিষয়ে ভবনের মালিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিন দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তারা কোনো উত্তর দেয়নি। কিছুদিন আগে মূল ফাইল হারানোর বিষয়টা জানতে পারি। একটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল ফাইল কিভাবে হারায়?”
বিশ্ববিদ্যালয়র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “জটিলতা সমাধান করে দ্রুত বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য বলেছি। আর গাফিলতির বিষয় সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী