ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চাঁদপুরে বিএসটিআই সিএম লাইসেন্স ছাড়াই চলছে পণ্য উৎপাদন

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৪ এপ্রিল ২০২১  
চাঁদপুরে বিএসটিআই সিএম লাইসেন্স ছাড়াই চলছে পণ্য উৎপাদন

চাঁদপুরে অবাধে চলছে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদন। এতে করে পণ্য উৎপাদনের গুণগত মান নিয়ে গ্রাহকদের মনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা রাইজিংবিডিকে বলেন, পণ্য উৎপাদনকারী অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। লাইসেন্সবিহীন ও লাইসেন্স নবায়ন না করেই অনেক বেকারি মালিক রমজানের ঈদকে সামনে রেখে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাইসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এতে করে ভেজাল ও মানহীন পণ্য বাজারে ছেড়ে তারা মানুষকে নানাভাবে প্রতারিত করবে। তাছাড়া সরকারও এতে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব বঞ্চিত হবে। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আমরা সংশ্লিষ্টগণের নিকট দাবি জানাচ্ছি।’

শনিবার (৩ এপ্রিল) হাজীগঞ্জ বাজারের হলুদপট্টির চন্দন অয়েল অ্যান্ড আটা মিলের জোড়া কবুতর ব্র্যান্ডের বি গ্রেডের সরিষার তেল উৎপাদন, মোড়কজাত ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মদন সাহা রাইজিংবিডিকে জানান, প্রায় ৪০ বছরের পুরনো তাদের এই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআই সিএম লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে ২০১৭ সালে। তবে দ্রুতই নতুন করে আবার লাইসেন্স নবায়নের কাজটি সেরে নিবো।’

এদিকে কাগজেপত্রে দেখা যায়, নিয়ম অনুযায়ী তাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রায় ১০ মাস ধরে লাইসেন্স নবায়ন করা ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পণ্যের লেবেল ছাড়াই চাঁদপুর, ঢাকাসহ আশেপাশের অন্যান্য এলাকাতেও সরিষের তেল সরবরাহ করছে তাদের এই প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, চাঁদপুর সদরের নিউ চাঁদ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির দুটি লাইসেন্স, এমকেএস ব্রিকস, চাঁদপুর পুরান বাজারের সাইফুল ফুড প্রোডাক্টসের তিনটি লাইসেন্স, এমডি মুসলিম অ্যান্ড বেকারির তিনটি লাইসেন্স, জনতা ব্রিকস, আনন্যা ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স ও মহানাম করর্পোরেশনের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের জুন মাসে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় মাদ্দাখাঁ বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স, এম বিএফ ব্রিকস, মনি ফুড প্রোডাক্টসের তিনটি লাইসেন্স, ইমাম ব্রিকস, মিম বেকারির তিনটি লাইসেন্স, রোকসানা ফুড প্রোডাক্টস, রাসেল প্রোডাক্টস, ন্যাচারাল কেয়ার বিডি, মিম বেকারির তিনটি লাইসেন্স, মাম ফুড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি, মামনি সুইটস অ্যান্ড কনফেকশনারির তিনটি লাইসেন্স, মতলব উত্তর উপজেলার হালিমা ব্রিকস, কচুয়া উপজেলার পলাশপুরের কেএফএল হেয়ার অয়েল কোম্পানি, ফরিদগঞ্জের একতা ব্রিকসসহ সংশ্লিষ্ট বহু প্রতিষ্ঠানের কারোরি লাইসেন্স রিনিউ করা নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি নিয়ম মতে পণ্য মোড়কজাতকারী, উৎপাদনকারী ও আমদানিকারককে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে তাদের পণ্যের অনুকূলে বিএসটিআই সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স গ্রহণ করতে আবেদন করতে হয়। এরপর তথ্য যাচাইকরণ, কারখানা পরিদর্শন, নমুনা সিলকরণ ও নমুনা জমাদানপত্র ইস্যুকরণ, পণ্য পরিক্ষণ ও রিপোর্ট প্রদান, রিপোর্ট সার্বিক মূল্যায়ন এবং আবেদনকারী কর্তৃক দাবিকৃত ফি জমাদানের মাধ্যমে শুরু হয় লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া।

কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাইসেন্স করতে নিয়মকানুন জানে না। তারা বিএসটিআই-সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করেই লাইসেন্স বাগিয়ে নেন বলে জানা যাচ্ছে। যাতে করে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, চাঁদপুরের প্রায় ৩৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিএসটিআই’র সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্সের মেয়াদ প্রায় ১০ মাস পূর্বেই উত্তীর্ণ হয়েছে। তবুও লাইসেন্স নবায়ন করতে মালিকপক্ষ কিংবা বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

বিএসটিআই কুমিল্লা অফিসের পরিদর্শক (সিএম) শাহেদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে জানান, লোক সংকট রয়েছে। তার ওপর পূর্বের তিন জেলার সাথে কুমিল্লা কার্যালয়ের সাথে আরো ৩টি জেলা জড়িত হয়েছে। যেজন্য কাজের একটু ধীরগতি। তবুও আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

বিএসটিআই কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (রসায়ন) খোদেজা খাতুন লাইসেন্স নবায়নের প্রসঙ্গে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে থাকি। অতএব যেই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তা দ্রুতই যাচাই করে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নোবো।’

এ ব্যপারে চাঁদপুর জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনতাসির মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুতই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ মোতাবেক বাজার মনিটরিং শুরু করবো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ব্যপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিবো।’

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ রাইজিংবিডিকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি আইনানুগভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়