ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চোখ নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে তার

সাভার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
চোখ নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে তার

চোখ দিয়ে ঝরছে রক্তধারা। ঝরছে নাক ও মুখ দিয়েও। জীবনে যেন দুর্যোগ নেমে এসেছে কিশোরী সাদিয়া আক্তার মুক্তার। 

নবম শ্রেণিতেই থমকে গেছে পড়ালেখা। অজানা ব্যধিতে আক্রান্ত কিশোরীর জীবন এখন দুর্বিষহ। মেয়ের এমন অবস্থায় দিশেহারা তার দরিদ্র বাবা-মা। 

বাবা নিজের ও শ্বশুর বাড়ির জমি বিক্রি করে দুই বছরের বেশি সময় ধরে মেয়ের চিকিৎসা নিয়ে ছুটতে ছুটতে নিঃস্বপ্রায়। এখন উপার্জনের স্বল্প টাকায় মেয়ের চিকিৎসা কিভাবে হবে, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না। 

সাভারের তেঁতুলঝোড়ার দক্ষিণ শ্যামপুর গ্রামে ভাড়া বাসায় বসবাস মুক্তাদের। গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলার সদর থানার হয়বতপুরে। পরিবারে মুক্তার বড় ও ছোট আরো দুই ভাই রয়েছে। মা গৃহিনী। তবে আগে তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এখন বাবা মাসুদ রানাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। তিনি স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানার বয়লার অপারেটর। মাত্র ষোল হাজার টাকা বেতনে পরিবারের ভরণপোষণেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।

মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি তিনদিনের ছুটিতে নাটোরে দেশের বাড়িতে গেছিলাম। ওইখানে ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট রোড এক্সিডেন্টের শিকার হই। ডান পা ভেঙে যায়। ও (মুক্তা) সহ্য করতে পারে নাই, ২৪ আগস্ট স্ট্রোক হয়। তখন ওর বয়স ১৩ বছর। আমার আর মেয়ের এ অবস্থা দেখে স্ট্রোক করে আম্মা মারা গেলো। এরপর আমার দাদিও মারা গেলো। এরপর থেকে ওর অসুস্থতা বাড়তে থাকে। এক সময় মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে।  তারপরে নাক দিয়ে। এরকম করতে করতে এখন দুই চোখ, মুখ, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে অঝোরে।’

মাসুদ রানা বলেন, ‘রক্ত পড়ার সময় চোখ জ্বালাপোড়া করে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।  একদম মারা যাওয়ার উপক্রম এরকম হয়ে যায়। প্রথম পাতলা রক্ত আসতো। এরপর দেখি ঘন। চোখের পানি যেরকম পড়ে ওই ভাবে দুই চোখ বেয়ে পড়ে। কখনও দশ মিনিট রক্ত পড়ে। আবার কখনও এক ঘন্টা ধীরে ধীরে পানির মতো পড়তে থাকে। কখনও দুই-চার মিনিট পড়ার পরেই বন্ধ হয়ে যায়, স্বাভাবিক হয়ে যায় এরকম। বমি যতক্ষণ বন্ধ না হয়, রক্ত পড়তেই থাকে। দিনে তিন-চার বার রক্ত আসে। দিনে না হলে রাতে রক্ত পড়েই।’

তিনি বলেন, ‘যখন স্বাভাবিক হয় আমি বুঝতেই পারি না যে ওহ অসুস্থ। খালি বুঝা যায় মুখ বাঁকা হয়ে গেছে, চোখ ট্যারা হয়ে গেছে। মানে স্ট্রোক করলে যা হয় এরকম। ’

চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার সাধ্য অনুযায়ী সব জায়গায় গেছি। ঢাকা নিউরো সাইন্স, শ্যামলি বক্ষব্যধি, জাতীয় নাক কান গলা, এনাম মেডিক্যালে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে দেখাইছি। সবশেষ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একমাস রাখছি। পরে ডাক্তাররা বাইরে ইন্ডিয়ার ভেলরে নিয়ে যাইতে বলছে।  প্রোপার ট্রিটমেন্ট করানোর মতো আমার এবিলিটি নাই। বাংলাদেশেও যে আমি একটু ভালো চিকিৎসা করাবো এই এবিলিটি নাই। নরমাল চিকিৎসাও এখন করাতে পারি না।  আমার সামান্য ষোল হাজার সাতশ টাকা বেতন। এছাড়া লাখ লাখ টাকা ঋণ হয়ে গেছে চিকিৎসা করাইতে গিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘ওর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হইছে। আমার সর্বস্বই গেছে। এখন নিঃস্ব পর্যায়ে চলে আসছি। ওর, আমার, ওর দাদীর একই টাইমে সব চিকিৎসা করাইতে হইছে। মিনিমাম লাখ দুয়েক টাকা হলে মেয়েকে আমি ইন্ডিয়া নিয়ে যেতে পারতাম।  আমার মেয়ে সুস্থ হোক এতটুকুন পেলেই আমার জন্য যথেষ্ট।’

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ এর উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণরত ডা. আমজাদুল হক বলেন, ‘এটাতো সচরাচর দেখা যায় না। রোগীর প্রেসক্রিপশন ও ছবি দেখে বুঝলাম এখানে আসলে একটা রোগ না একাধিক রোগ আছে এবং ব্লাড ডিজঅর্ডার আছে। সঙ্গে সাইকোলজিক্যাল এবং নিউরোলজিক্যাল প্রোবলেম আছে।’
যোগাযোগ : মাসুদ রানা মুক্তার পিতা : 01718-651980 (বিকাশ)
হিসাব নং - 1508201964164001
ব্র্যাক ব্যাংক ইপিজেড শাখা, সাভার, আশুলিয়া।

আরিফুল ইসলাম সাব্বির/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়