ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জ্বালানি তেল বিক্রির লাভ-লোকসান নিয়ে বিভ্রান্তি

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১০:২৬, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩
জ্বালানি তেল বিক্রির লাভ-লোকসান নিয়ে বিভ্রান্তি

লোকসানের হিসাবে নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন-বিপিসির পক্ষে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, লাভ-লোকসানের পরিসংখ্যান নিয়েও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী তার বাসভবনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, বিপিসি গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে আট হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। অন্যদিকে বিপিসির চেয়ারম্যান ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে গত ২৭ ডিসেম্বর দাবি করেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান ৯ হাজার কোটি টাকা লোকসান করেছে।

কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০২২ সালের ২২ মে পর্যন্তও প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ছিল; অর্থাৎ গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে মে ২২ তারিখ (২০২২ মে) পর্যন্ত বিপিসি মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এখন কার পরিসংখ্যান বা তথ্য সঠিক তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত ৯ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বিপিসি মুনাফার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বছরভিত্তিক পরিংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, বিপিসি তেল বিক্রি করে গত আট বছরের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফাও করেছে। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক বিপিসির মুনাফার ৫০ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল?

জানা গেছে, মুনাফার একটি অংশ (প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা) এক আইনীয় বলে অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ে এসেছে। এবং মুনাফা আরো একটি অংশ বিপিসি কিছু ‘বিলাসী’ উন্নয়ন প্রকল্পে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরও মুনাফার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিপিসির হাতে থাকার কথা।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বিপিসি গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মে পর্যন্ত কোনো বছরই তেল বেঁচে লোকসান দেয়নি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪৮ হাজার ১২২ কোটি ১১ লাখ টাকা। শুধু তা-ই নয়, চলতি অর্থবছরে মে ২২ পর্যন্ত ১১ মাসে তেল বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি নিট মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি তেল বেঁচে মুনাফা করা শুরু করে। সে বছর প্রতিষ্ঠানটি মুনাফার পরিমাণ ছিল চার হাজার ১২৬ কোটি আট লাখ। এর পরের অর্থবছর ২০১৫-১৬-তে মুনাফা করেছে ৯ হাজার ৪০ কোটি সাত লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মুনাফা আট হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে একইভাবে মুনাফা করেছে, ২০১৭-১৮-তে পাঁচ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯-তে চার হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০-তে পাঁচ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০২০-২১ মুনাফা করেছে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে মে ২২ তারিখ পর্যন্ত বিপিসির মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

জানা গেছে, বিপিসি উন্নয়নের প্রকল্পের নামে কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করছে, যাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে পদ্মা ওয়েলের নামে ঢাকার শাহবাগে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ১২তলা ভবন নির্মাণ। এটি একটি আবাসিক ভবন হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামেও বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প হাতে নেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

দেশে প্রতি বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬৫ লাখ টন। এর আবার ৭৩ শতাংশ ডিজেল দ্বারা পূরণ করা হয়। ডিজেলের প্রায় পুরোটায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে অকটেনের চাহিদার অর্ধেকের বেশি এবং পেট্রোলের পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হয়। তাই দেশে উৎপাদিত এই দুই পণ্যের দাম বাড়ানোকে অনেকে অযৌক্তিক ও অন্যায় বলেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে সরকার ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স নেয়। এই ক্রান্তিকালীন সরকার যদি এই কর না নিত তবে দাম না বাড়িয়ে লোকসান সামাল দেওয়া সম্ভব হতো।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করলেও দেশে গত বছর ৫ আগস্ট রাত ১২টা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন তেল ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে (বৃদ্ধির হার ৪২.৫ শতাংশ)। একইভাবে অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা (বৃদ্ধির হার ৫১.৬৮ শতাংশ) এবং পেট্রোল লিটারে ৪৪ টাকা বৃদ্ধি করে ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ করা হয়েছে (বৃদ্ধিও হার ৫১.১৬ শতাংশ)। সার্বিকভাবে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছর ৪ নভেম্বর ডিজেলের লিটার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়।

/হাসনাত/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়