ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দৈন্যদশা কাটাতে শ্যামপুর সুগারের পর্ষদকে তলব বিএসইসি’র

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫২, ২৩ মার্চ ২০২৩  
দৈন্যদশা কাটাতে শ্যামপুর সুগারের পর্ষদকে তলব বিএসইসি’র

পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের আর্থিক দৈন্যদশা কাটছেই না। বরং বছরের পর বছর পাল্লা দিয়ে কোম্পানিটির লোকসান বাড়েই চলেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগও বেড়েছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক সংকট নিরসনের লক্ষে সামগ্রী নিয়ে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বুধবার (২৯ মার্চ) বিএসইসির সঙ্গে শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলাম।

সম্প্রতি শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, অপারেটিং পারফরম্যান্সের অবনতির কারণে কোম্পানিটি ব্যাপক পুঞ্জীভূত লোকসানের পাশাপাশি নেতিবাচক ইকুইটিতে রয়েছে। যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ ও ক্ষতি বৃদ্ধি করছে। তাই কোম্পানিকে আগামী ২৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনের সভা কক্ষে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে সকলকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো। সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করবেন। সভায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাথে ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং কোম্পানি সচিবকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির যন্ত্রাংশ অনেক পুরনো হয়ে গেছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আখ থেকে রস ও চিনি আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লোকসান বেড়েই চলেছে। তবে মিলটির অব্যবহৃত জমির পরিমাণ অনেক। এই জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে কিছু বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মিলটির জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে কোম্পানিটিকে লাভজনক করা সম্ভব বলে মনে করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারায় বড় ধরনের আর্থিক দৈন্যদশায় পড়েছে কোম্পানিটি।

তথ্য মতে, ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনও লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৩.০৩ টাকা। আগের হিসাব বছরের একইসঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১২৫.১৪ টাকা।

এদিকে, শ্যামপুর সুগার মিলসের গত ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২২) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭.৩৯ পয়সা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ২২.৫৩ টাকা। এছাড়া আলোচ্য হিসাব বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২২) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২৬.৬৯ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪৪.১৫ টাকা। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির ঋণাত্মক শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল দাঁড়িয়েছে (১১৯৪.২৬) টাকা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হয় শ্যামপুর সুগার মিলস লিমিটেড। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। এর মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সরকারের হাতে ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.৮৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৮.১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯৬.৫০ টাকায়। তবে আর্থিক অবস্থা দুর্বল হলেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। চলতি বছরের ১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৬৩.১০ টাকা। আর ২৩ মার্চ অর্থাৎ ১৫ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬.৫০ টাকা। কোনও প্রকার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে বলে মনে করে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায়  সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেয় ডিএসই। ওই চিঠির জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনও অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই তাদের শেয়ারের দাম বাড়ছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে রয়েছে। বছরের পর বছর কোম্পানিটির লোকসান বাড়ছে। তাই কোম্পানিটির আর্থিক সংকট নিরসনে পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে।

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়