ঋণ অনিয়ম রোধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন নির্দেশনা 

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ঋণ যথাযথভাবে আদায় না হওয়ায় তারল্য প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ, লিজ, বিনিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম রোধে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সোমবার (২৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। 

ঋণ অনিয়ম রোধে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন (আইসিসি) ব্যবস্থাপনা জোরদার এবং ড্যাশবোর্ড স্থাপন প্রসঙ্গে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল প্রকার ঋণ, লিজ, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় মান সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালনের জন্য একটি নিয়মিত অডিট কমিটি (বা যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) গঠনের বিষয়ে নির্দেশনা আছে। এছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স (আইসিসি) নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিরীক্ষা কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য, সাংগঠনিক কাঠামো, সদস্য হওয়ার যোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু, সম্প্রতি কতিপয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিতরণকৃত ঋণ যথাযথভাবে আদায় না হওয়ার ফলে তারল্য প্রবাহ হ্রাস ইত্যাদির কারণ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর বিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ কর্তৃক সময় সময় প্রদত্ত নির্দেশনা পরিপালন না করে জামানতবিহীন বা পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ ব্যতিরেকে ঋণ বিতরণ, একক গ্রাহককে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ঋণসুবিধা প্রদান, ঋণ বিতরণের পূর্বে যথাযথ ডকুমেন্টেশন না করা, বিতরণকৃত ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত না করা ইত্যাদির ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন (আইসিসি) ব্যবস্থাপনার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন ব্যবস্থাপনা কার্যকর ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে ঋণ বা লিজ বা বিনিয়োগের তদারকি জোরদার ও ঋণশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, ১ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের যেকোনো প্রকার ঋণ বা লিজ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ডিউ ডিলিজেন্স ও বিধিবিধান পরিপালন, ঋণ বিতরণের পূর্বে ডকুমেন্টেশন যথাযথভাবে সম্পাদনসহ ঋণ নিয়মাচার সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ব স্ব ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্সের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পূর্বে প্রাক-নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে ও প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট নথিতে সংরক্ষণ করতে হবে।

যেকোনো প্রকার ঋণ বা লিজ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর বিধান অনুযায়ী পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ, সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট অনুসরণ, ঋণের গুণগত মান ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ঋণ নিয়মাচার পরিপালনের বিষয়াদি নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ড্যাশবোর্ড স্থাপন করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী এবং অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন বিভাগের প্রধান নিয়মিত উক্ত ড্যাশবোর্ড মনিটরিং করবেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর বিধান অনুযায়ী সহায়ক জামানত গৃহীত হয়নি, একক গ্রাহকের অনুকূলে প্রদেয় সর্বোচ্চ ঋণের সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে, ঋণের সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত সার্কুলার পরিপালিত হয়নি এবং ঋণের নিয়মাচার সংক্রান্ত নীতিমালা পরিপালিত হয়নি, এরকম ঋণের তথ্য প্রত্যেক মাস শেষ হওয়ার পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে আবশ্যিকভাবে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিপালন বিভাগের প্রধানের স্বাক্ষরে বিবরণী আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে পাঠাতে হবে।

প্রাক-নিরীক্ষা সম্পাদনকালে বর্ণিত বিষয়ে যদি এমন কোনো গুরুতর অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়, যা ঋণশৃঙ্খলা বিরোধী এবং ভবিষ্যতে ঋণ আদায় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এরকম ক্ষেত্রে এ নির্দেশনায় বর্ণিত প্রতিবেদন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তা তাৎক্ষণিকভাবে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরিত প্রতিবেদনের একটি কপি আইসিসি প্রধান কর্তৃক সরাসরি অডিট কমিটির চেয়ারম্যান বরাবরে পাঠাতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় প্রাপ্ত ত্রুটি-বিচ্যুতির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ এর ১৮ (ছ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা অবিলম্বে কার্যকর হবে।