ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নেই নতুন সুখবর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ১ জুন ২০২৩  
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নেই নতুন সুখবর

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নতুন কোনো সুখবর নেই। তবে দুঃসংবাদও নেই।

পুঁজিবাজার গতিশীল করার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইস), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কর ছাড়, নীতি সহায়তাসহ বেশ কিছু দাবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানিয়েছিল। তবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট শেয়ারবাজার বান্ধব হবে, এমনটাই মনে করেছিলেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন তারা। তবে চলমান সুযোগ-সুবিধা বহাল রেখেই অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট। সেখানে কোম্পানিগুলোর করপোরেট করসহ অন্যান্য নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

করপোরেট কর

পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো এবং তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছিল তারা। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে সাড়ে ২২ শতাংশ কর দিতে হয়। তাদের প্রস্তাবনা ছিল এটি কমিয়ে যেন ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তাদের এই প্রস্তাব নাকোচ করে আগের মতোই রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।

অপ্রদর্শিত অর্থ

অন্যদিকে বাজার আরও গতিশীল করতে বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ চেয়েছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে সুযোগ দেয়ার পর সাড়া না পাওয়ায় এবার এই প্রস্তাবও রাখা হয়নি। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে না।

করমুক্ত লভ্যাংশ আয়

পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডাররা করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়িয়ে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন। বর্তমানে এই সীমা ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা লভ্যাংশ আয় পর্যন্ত কোনো কর দিতে হয়নি। কোনো বিনিয়োগকারী এর চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পেলে বাড়তি লভ্যাংশ তার অন্যান্য আয়ের সাথে যোগ করে মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য হারে কর ধার্য করা হয়। তবে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কিছু বলেননি। তাই ধরে নেয়া যায়, বর্তমান সীমা বহাল থাকবে। তবে অর্থবিল প্রকাশ হলে তা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

দ্বৈত কর

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ বাবদ আয় থেকে কেটে রাখা করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধন্ত নেননি অর্থমন্ত্রী। ফলে আগের মতোই বহাল থাকছে দ্বৈত কর।

মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) মার্চেন্ট করপোরেট করের হার কমানোর প্রস্তাব করেছিল। বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সমান হারে অর্থাৎ ৩৭.৫০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। তবে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তাই ধরে নেয়া যায়, বর্তমান সীমাই বহাল থাকবে। তবে অর্থবিল প্রকাশ হলে তা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সিকিউরিটিজ লেনদেনে অগ্রীম আয়কর

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর বিদ্যমান অগ্রীম আয়করের হার কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল। এতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্রোকার ও বিনিয়োগকারী লাভবান হবে। বাজারে লেনদেন বাড়বে। আর দীর্ঘ মেয়াদে তাতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। তবে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

জিরো-কুপন বন্ডের আয় কর

বর্তমানে জিরো-কুপন বন্ডের (যে বন্ডে সুদ বা মুনাফা বিতরণের কোনো কুপন যুক্ত থাকে না) আয়ে করমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। সব ধরনের বন্ড জনপ্রিয় করে একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট চালুর লক্ষ্যে কুপনযুক্ত বন্ডের আয়কেও একই সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে ঘোষিত বাজেটে বন্ডের আয়ে কর সংক্রান্ত কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে কুপনযুক্ত বন্ডের আয় করমুক্ত হচ্ছে না। অর্থাৎ এই ধরনের বন্ডের আয়ের উপর কর দিতে হবে। তবে ঘোষিত বাজেটে বন্ডের আয়ে কর সংক্রান্ত কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে কুপনযুক্ত বন্ডের আয় করমুক্ত হচ্ছে না। অর্থাৎ এই ধরনের বন্ডের আয়ের উপর কর দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ প্রতিপাদ্যে বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চাঙ্গা করতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিশাল বর্ণনা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

এবারের বাজেটের মূল শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ব্যয় চালাতে এনবিআরকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা।
 

এনটি/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়