ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না যে কারণে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ৫ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ০৯:৩৫, ৫ জুলাই ২০২৩
রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না যে কারণে

চার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ’ (আইআরডি)।

আইআরডি বলছে, প্রতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, করের আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা, আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা, দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা না থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে আইআরডি। রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন এবং সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাটাও চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে আইআরডি।

বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছর বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, সেটি অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্জন করা সম্ভব হয় না। গত তিন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি।

উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার একটি বড় সাইজের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আইআরডি আওতাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

আইআরডির তথ্যমতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২ লাখ ১৮ হাজার ৪০৬ কোটি ৫ লাখ টাকা, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের পথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২২-মার্চ ২০২৩) রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের মূল ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কাটছাঁট করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা (এনবিআর ৩,০০,৫০০ কোটি টাকা ও নন-এনবিআর ১২,৫৬৭ কোটি টাকা)। অর্থ বিভাগের হিসাবে, এর বিপরীতে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

আইআরডি হিসাবে, গত ২০২১-২০২২অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭.৫৮। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৪৯। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৮.৬১ শতাংশ।

সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জন করা তো দূরের কথা, সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র কমানোর পরও ব্যয় সমন্বয় করতে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আইআরডি রাজস্ব আদায়ের বাধা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের উপায় বের করতে পরিকল্পনা করছে।

/হাসনাত/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়