ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১০ জুলাই ২০২৩   আপডেট: ০৯:১১, ১০ জুলাই ২০২৩
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কা

বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা এবং দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব আদায়ের ধারা অক্ষুন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত অর্থবছরের মতো চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরেও এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআর বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি এনবিআর সরকারের সঙ্গে যে কর্মসম্পাদন চুক্তি করেছে তাতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কর্মসম্পাদন চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)-এর তথ্য মতে, সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২২-মার্চ ২০২৩) সাময়িক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ ১৯ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। তবে অনানুষ্ঠানিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মে মাস (১১ মাস) পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে নির্ধারিত সময়ে এনবিআর আদায় করেছে দুই লাখ ৮০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম।

এনবিআর বলছে, করের আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য নতুন করদাতাদের তথ্যের অপ্রতুলতা রয়েছে। করদাতা অনুপাতে কর অফিসে জনবল স্বল্পতা বিদ্যমান। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস ও অবকাঠামোর অভাব, ডিজিটাল অর্থনীতিকে করের আওতায় আনার বিষয়ে সক্ষমতার অভাব ও আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা রয়েছে।

এনবিআর জানায়, ভবিষ্যতে আয়কর তথা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র বাড়ানোর জন্য সংস্থার কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক তথ্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে করের আওতা বাড়ানো; ই-টিডিএস সিস্টেমে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন; আয়কর আইনের ১১৭-এ ধারায় কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষে মনিটরিং বাড়ানো; হিউম্যান বিহেভিয়ারাল প্যাটার্ন পর্যালোচনা করে নতুন করদাতা শনাক্তকরণ; আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) স্কিম গ্রহণের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের করদাতাদের সহজে কর প্রদানসহ রিটার্ন দাখিলে উদ্বুদ্ধকরণ; অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাড়ানো।

এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণ ও অটোমেশন কার্যক্রম জোরদার করা; কর ফাঁকি রোধ ও ট্যাক্স-পেয়ার সার্ভিস চালু; দেশে-বিদেশে কর্মকর্তা-কমচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’র মাধ্যমে রাজস্ব আদায় জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষকে ই-টিডিএস সিস্টেমের আওতাভুক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল-এর সক্ষমতা জোরদার করার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য থেকে কর আদায় বৃদ্ধি ও কর ফাঁকি নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এনবিআর এর হিসাবে, সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট টিআইএনধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭ লাখ। গত ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬২ লাখ ৫২ হাজার ৩৬১ জন এবং ৭৫ লাখ ১৯ হাজার ৯১৬ জন। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত টিআইএনধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১১ লাখ ৮০ হাজার।

জানা গেছে, গত তিন বছরে আয়কর খাতে আদায় বেড়েছে। তবে আদায় বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

এনবিআর এর হিসাব মতে, গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৯৭ হাজার কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা; ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এক লাখ ছয় হাজার কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাময়িক হিসাবে আদায় হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয়কর খাতে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর এর বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এটি বাজেটে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বেশি।

/হাসনাত/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়