ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, চ্যালেঞ্জের মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ১৩ আগস্ট ২০২৩  
নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, চ্যালেঞ্জের মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এ নিয়ে সরকার পড়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। তাই, সরকারের দুশ্চিন্তা বেশি। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন পরিস্থিতিতে সাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সরকারের সব মহল থেকে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে, রপ্তানি বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হচ্ছে না।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ নানা কারণে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাতটি চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে—স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা, আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বিশ্বায়নের ফলে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো।

গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড প্রিফারেন্সিয়াল সিস্টেম এমং দ্য মেম্বার স্টেটস অব দ্য ওআইসি (টিপিএস-ওআইসি) এবং ডি-৮ জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ডি-৮ প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (ডি-৮ পিটিএ) কার্যকর করেছে এবং আরটিএ পলিসি ২০২২ প্রণয়ন করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ চুক্তি কার্যকরকারী দেশগুলোতে শুল্ক ছাড় কিংবা হ্রাসকৃত শুল্কে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি নীতি ২০২৩-২০২৬ প্রণয়ন করা হবে এবং আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪ বাস্তবায়ন ও শিল্পায়নের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ট্রেড পার্টনারদের বাজারে পণ্য ও সেবার অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার অর্জন করা হবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়া দেশগুলোর জন্য বিদ্যমান শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত বাজার সুবিধা এবং ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটসের (ট্রিপস) আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য ফার্মাসিউটিক্যালের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত অব্যাহতি সুবিধা উত্তরণ-পরবর্তী ছয় বছর অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা হবে।

রপ্তানি নীতি ২০২১-২০২৪ অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৮ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার কথা রয়েছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার। সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আছে—আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সই করার লক্ষ্যে দুটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা, বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ, রপ্তানি নীতি ২০২৩-২০২৬ প্রণয়ন করা, তৈরী পোশাক কারখানায় কমপ্লায়েন্স অর্জনে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ২৫০টি বাজার মনিটরিং এবং ডিজিটাল বাণিজ্য আইন ২০২৩-এর খসড়া প্রণয়ন করা।

হাসনাত/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়