ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মানুষের হাতে যথেষ্ট অর্থ রয়েছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
মানুষের হাতে যথেষ্ট অর্থ রয়েছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেছেন, বাজারে যেসব পণ্য ঢুকছে, তা অবিক্রীত থাকছে না। ক্রেতারা কেউ খালি হাতে ফিরছেন না। মানুষের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট অর্থ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সিরাপ অডিটোরিয়ামে ‘দ্রব্যমূল্যে অস্থিরতা : উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্চ ফেলো ড. বদরুন্নেসা আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম। 

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজার কখনো নজরদারি করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বাজারের একটা সাপ্লাই চেইন আছে। এ সাপ্লাই চেইনে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, কৃষি পণ্যগুলো হার্ভেস্টিংয়ের সময় বেশি উৎপাদন হয়। তারপর ৩-৪ মাস উৎপাদন হয় না। এ সময় যদি আপনি এটাকে গুদামজাত না করেন... গুদামজাত করা ও মজুতদারি এ দুটির মধ্যে যদি পার্থক্য নির্ধারণ না করতে পারি, বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইভাবে আমদানি পণ্য আমরা যদি সিজনে না কিনে অফ-সিজনে কিনি, বেশি দাম দিতে হবে।

তিনি বলেন, তেল ও চিনি এ দুটি আমরা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আমদানির ওপর নির্ভরশীল থেকে আমাদের মতো একটা দেশে ১৭ কোটি মানুষকে আমদানি করে সরবরাহ করা বেশ কঠিন।

আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজারে কিন্তু যে পণ্য আমাদের ঢুকতেছে তা অবিক্রীত থাকছে না। কেউ কিন্তু আবার খালি হাতে ফিরছে না। এদেশে এ সময় দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যের সংকট ছিল। বাজারে টাকা দিলেও খাদ্য পাওয়া যেত না। সেখান থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি। আমাদের এখন চাল আমদানি করতে হয় না। মানুষের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা আছে।

প্রধান অতিথির ভাষণে মসিউর রহমান বলেন, আমাদের দেশে দোষ চাপানোর প্রবণতা বেশি। এখানে দোষ হলো- ব্যবসায়ীর, শিল্পপতির ও সরকারের। আর কারও দোষ নেই! এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সামনে কীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যায়, সে জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে না পারলে যত আইনই করেন বা থাকুক, তা কার্যকর করা যাবে না। তাই বাজার ব্যবস্থাপনায় বিধি, নিয়ন্ত্রক ও হস্তক্ষেপের পার্থক্য খেয়াল রাখতে হবে। পণ্যের উৎপাদন ও আমদানি পণ্যের বন্দর থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তা দূর করা দরকার। এটা করা না গেলে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যায়।

বিআইডএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরী বলেন, মূল্যস্ফীতি ও অস্থিরতা আলাদা বিষয়। এর মধ্যে পার্থক্যও রয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি বেশি হলে অস্থিরতাও বাড়ে, এটা ঠিক। সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা থাকলেও অস্থিরতা বাড়ে। এর সমাধানের জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করতে হবে। আমদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার দিকে নজর রাখতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতি ঠিক করতে হবে। এটি ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এটি সমাধান করা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো যাবে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলে আশা করছি লক্ষ্য অর্জন সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, সরবরাহের বিষয়ে বলবো, এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক থেকে শুরু করে তদারকিতে যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের শক্তি বাড়াতে হবে। একেক ক্ষেত্রে একেক তথ্য থাকে। তথ্যের এ বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। এ ছাড়া, কৃষিপণ্য বা ভোগ্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। যাতে তারা কোন পণ্য রপ্তানি বন্ধ করলে তা আগে থেকে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি পণ্যের ভবিষ্যৎ বাজার দর নির্ধারণে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করা যেতে পারে।

গোলাম রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট এবং দাম কমে গেলে ব্যবসায়ীদের কষ্ট হয়। এর মধ্যে অতিধনি বা ধনী শ্রেণি এবং অতিদরিদ্র বা দারিদ্রসীমার নিচের লোকদের কোনও সমস্যা হয় না। এর কারণ হলো, যারা দরিদ্র তাদের লক্ষ্য থাকে টিসিবি আসবে কবে, বিধবাভাতা পেল কি না, বয়স্ক ভাতাপেল কি না ইত্যাদি। আর যারা ধনী তারা যা চায় তা-ই পায়। এজন্য তাদের চিন্তা নেই। সমস্যা হলো, মাঝখানের ১০ কোটির বেশি মানুষের। যারা মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের বাজারে যখন কোনও পণ্যের দাম বাড়ে তখন এটি জ্বর-সর্দি পর্যায়ে থাকে। তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখে। আর এর থেকে খারাপ কিছু হলে সংশ্লিষ্ট অন্যরা দেখেন। সেজন্য আমি মনে করি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ থাকা দরকার। একটি বাণিজ্য বিভাগ, অন্যটি ভোক্তা অধিকার বিভাগ। এটি করা গেলে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়