সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিকদের ১০ দফা
নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরী মালিক ঐক্য পরিষদ
দেশের সকল ধরনের জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী ও ট্যাংকলরী মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছে।
রবিবার (১১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এই ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “প্রাপ্ত কমিশনের পুরোটাই আমাদের মুনাফা নয়। উক্ত কমিশনের মধ্যেই ইভাপোরেশন, অপারেশন এবং হ্যান্ডলিং লস্ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ প্রাপ্ত কমিশন থেকে ইভাপোরেশন, অপারেশন এবং হ্যান্ডলিং লস্ বাদ দিয়ে যেটা থাকে, সেটা থেকে কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিল, বিভিন্ন লাইসেন্স ফিস, ইনকাম ট্যাক্স, স্টেশনারি সহ বিভিন্ন খরচ বহন করার পর যেটা থাকে, সেটাই আমাদের নীট মুনাফা।”
তিনি বলেন, “বিগত বছরগুলিতে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন লাইসেন্স ফি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মচারী বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স ফিসও কয়েক গুণ করা হয়েছে। অথচ আমাদের কমিশনের হার বৃদ্ধি তো দূরের কথা, কমিশনের হার আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “২০২৩ সালে আমরা কমিশন বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন দাবী আদায়ে কর্মসূচী দিলে সরকার তেল বিক্রির কমিশন পুনঃনির্ধারণের নিমিত্তে সুপারিশ বা ফর্মুলা প্রণয়নের জন্য বিপিসির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটি আমাদের আপত্তি সত্ত্বেও পেট্রোল পাম্প পরিচালনায় বিভিন্ন খরচ এবং ফিস পর্যালোচনা পূর্বক (যাহা বাস্তব বিবর্জিত) কমিশনের হার সরকার বরাবরে প্রস্তাবনা করে। যা এমন ছিল: পেট্রোল, অকটেন ডিপো মূল্যের ৫% এবং ডিজেল ৩%, কিন্তু জ্বালানী মন্ত্রণালয় বিপিসির সুপারিশ বা প্রস্তাবনা বিবেচনায় না নিয়ে মনগড়া এবং একতরফাভাবে কমিশনের হার কমিয়ে ২৬-০৯-২০২৩ তারিখ গেজেট প্রকাশ করে। আমরা সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে মন্ত্রণালয়সহ বিপিসিতে প্রতিবাদ জানাই।”
বিপিসি কর্তৃক কমিশন নির্ধারণে উল্লেখিত প্রস্তাবিত ফর্মুলা বা সুপারিশের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, “বিপিসির ঐ বাস্তব বিবর্জিত ফরমুলায় একটি পেট্রোল পাম্পের মাসিক বিদ্যুৎ বিল ধরা হয়েছে ৩,৪০০ টাকা। একটি ছোট বাসায় যেখানে কোন মটর-এয়ার কন্ডিশন চলে না, সেখানেওতো মাসিক বিদ্যুৎ বিল এর চেয়ে বেশি। অথচ বিপিসি একটি পেট্রোল পাম্পের বিদ্যুৎ খরচ ৩,৪০০ দেখিয়ে কমিশন নির্ধারণের ফরমুলা তৈরি করেছেন। এতে সহজেই বোধগম্য যে, তাদের প্রণীত সুপারিশমালা তৈরিতে কতটা বাস্তব বহির্ভূত ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়েছে । এভাবে তারা প্রতিটি খরচ ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক কম দেখিয়ে ফর্মুলা তৈরি করেছেন।”
তিনি বলেন, “যেখানে আমাদের দাবি ছিল তেল বিক্রির কমিশন ৭% করা। সেখানে জ্বালানী মন্ত্রণালয় তাদের দ্বারাই গঠিত কমিটির এই অবাস্তব ফর্মুলার সুপারিশ বাদ দিয়ে কমিশনের হার আরও কমিয়ে গেজেট প্রকাশ করেছেন। উক্ত গেজেটের ফলে আমাদের কমিশনের হার আগের তুলনায় আরও কমে যায়। আমাদের কমিশনের হার কমিয়ে দেওয়ার ফলে বর্তমানে আমাদের প্রাপ্ত কমিশনের চিত্র এমন-
বর্তমানে অকটেনের আমাদের ক্রয় মূল্য ১১৯.০২ টাকা প্রতি লিটার। বিপিসির প্রস্তাবিত হার ডিপো মূল্যের ৫% অর্থাৎ কমিশন হওয়ার কথা ৫.৯৫ টাকা প্রতি লিটারে। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ৫.০৯, অর্থাৎ বিপিসির প্রস্তাবনার চেয়েও বর্তমানে প্রতি লিটারে আমাদের কমিশন ০.৮৬ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে। ডিজেলের ডিপো মূল্য ১০০.২৫ টাকা প্রতি লিটার। বিপিসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী কমিশন দাঁড়ায় ৩% অর্থাৎ ৩.০০৭৫ টাকা। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ২.৮৬ টাকা। অর্থাৎ বিপিসির সুপারিশ বা প্রস্তাবনার চেয়েও প্রতি লিটার ডিজেলে আমাদের কমিশন প্রায় ০.১৫ টাকা কম দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি পেট্রোল পাম্পের শুধুমাত্র ডিসপেন্সিং ইউনিটের জন্য প্রতি বছর ১ বার পরিমাপ যাচাই পূর্বক নজেল প্রতি ১০০০.০০ টাকা ফিস নেওয়ার নিয়ম ছিল। সম্প্রতি তারা ঐ এক হাজার টাকা ফিস বর্ধিত করে ৩০০০.০০ টাকা করেছেন। শুধু তাই নয় তারা এখন আন্ডারগ্রাউন্ড, ডিপ রড ইত্যাদির উপর নতুনভাবে ফিস ধার্য্য করেছেন এবং বিএসটিআইতে নিবন্ধন বা লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা জারী করেছেন।
২০২৫ সালেও কয়েকবার আমাদের সমস্যা উল্লেখ পূর্বক এর সমাধান চেয়ে এবং আমাদের দাবিসমূহ পূরণের আহ্বান জানিয়ে সরকার বরাবরে আবেদন করেছি। কয়েকবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছি। কর্মসূচী ঘোষণা করেছি। কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ২৭-০২-২০২৫ তারিখ সর্বশেষ বিপিসি চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে সভা করেছি। ঐ সভায় বিপিসির চেয়ারম্যান ২ মাস অর্থাৎ ২৭-০৪-২০২৫ তারিখের মধ্যে আমাদের দাবী পূরণ এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ঘোষিত ১ মার্চ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ করলে আমরা কর্মসূচী স্থগিত করেছি। কিন্তু আজ ১১ মে অর্থাৎ প্রায় আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।”
তিনি বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে আমাদের জ্বালানী তেলের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার মনস্থির করেছি। তবে শেষ চেষ্টা হিসেবে ১০ মে সমগ্র দেশের তেল ব্যবসায়ী এবং অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৪ মে’র মধ্যে আমাদের দাবি পূরণের অনুরোধ করছি। অন্যথায় ২৫ মে প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশের সকল পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি কর্মবিরতি পালন করবে। এতে জ্বালানী তেলের উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপনন বন্ধ থাকবে। তবে হজ্ব ফ্লাইট এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সচল রাখার জন্য বিমানের তেল পরিবহন চালু থাকবে।”
সে সাথে জ্বালানী তেলের ভোক্তা সাধারণকে কর্মসূচি শুরুর আগইে চাহিদা মাফিক তেল সংগ্রহ করারও অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরী মালিক ঐক্য পরিষদ যে ১০ দফা দাবি দিয়েছে, তা হলো:
১। তেল বিক্রয়ের কমিশন ন্যূনতম ৭% করতে হবে।
২। সওজ অধিদপ্তরের ভূমির ইজারা মাশুল পূর্বের ন্যায় বহাল রাখতে হবে।
৩। পাম্পের সংযোগ সড়কের ইজারা প্রাপ্ত ভূমির নবায়নকালীন সময়ে ইজারা নবায়নের আবেদনের সাথে নির্ধারিত ইজারা মাশুলের পে-অর্ডার, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরে জমা প্রদান করলে তার ইজারা নবায়ন বলিয়া বিবেচিত হওয়ার বিধান করতে হবে।
8। বিএসটিআই কর্তৃক পূর্বের ন্যায় শুধু ডিসপেন্সিং ইউনিট স্টেমপিং এবং পরিমাপ যাচাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং ফিস সমূহ পূর্বের ন্যায় করতে হবে। আন্ডার গ্রাউন্ট ট্যাংক কেলিবারেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফিস এবং নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে।
৫। যেহেতু পেট্রোল পাম্প কোন শিল্প নয়, কমিশন এজেন্টভিত্তিক ব্যবসা তাই পেট্রোল পাম্পের ক্ষেত্রে পরিবেশ, বিআরসি কলকারখানা এবং ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স/নিবন্ধন বিধান বাতিল করতে হবে।
৬। দেশের বিভিন্নস্থানে অননুমোদিত এবং অবৈধভাবে ঘরের মধ্যে এবং খোলা স্থানে যত্রতত্র মেশিন স্থাপন পূর্বক অবৈধভাবে জ্বালানী তেল বিক্রয় বন্ধ করতে হবে।
৭। বিপনন কোম্পানি থেকে ডিলারশিপ ছাড়া সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
৮। ট্যাংক লরী চালক সংকট থেকে উত্তরণে ট্যাংকলরী চালকদের লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স ইস্যু সহজতর করতে হবে।
৯। গাড়ীর কাগজপত্র পরীক্ষার নামে রাস্তায় যত্রতত্র ট্যাংকলরী থামনো যাবে না। তেলের ডিপু গেটে ট্যাংকলরীর কাগজপত্র পরীক্ষার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
১০। সকল ট্যাংকলরীর জন্য আন্তজেলা রুট পারমিট ইস্যু করতে হবে।
এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটি যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন, মোহাম্মদ নাজমুল হক, জুবায়ের আহাম্মেদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা/রায়হান/টিপু