রিং শাইনের জালিয়াতি, ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ২৭৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিতে সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই জালিয়াতির নেপথ্যে কোম্পানিটির তৎকালীন উদ্যোক্তা, পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিব, সিএফও, নিরীক্ষিক এবং বাইরের ব্যক্তিরাও শেয়ার বরাদ্দ পাওয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ১ জুলাই কমিশনের সভা কক্ষে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৬১তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ১০টাকা মূল্যের ২৭ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৮২০টি শেয়ার ইস্যু করে মোটি ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা মূলধন বৃদ্ধি করে। কোম্পানিটি তার পরিশোধিত মূলধন ৯.৯৫ কোটি টাকা হতে ২৮৫.০৫ কোটি টাকায় উন্নীত করে। পরবর্তীতে অর্থ জমা ছাড়া প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ইস্যু বা বরাদ্দের মাধ্যমে ২৭৫ কোটি টাকার মূলধন বৃদ্ধি সংশ্লিষ্ট সংঘবদ্ধ আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ উঠে এবং এ বিষয়ে তদন্ত পরিচালিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন আইনি প্রক্রিয়ায় শুনানি শেষে রিং শাইন টেক্সটাইলের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ারের অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১. আইপিও প্রসপেক্টাসে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করার কারণে রিং শাইন টেক্সটাইলসের উদ্যোক্তা, তৎকালীন পরিচালকগণ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী পরিচালকসহ মোট ৯ জন এবং কোম্পানিটির তৎকালীন সিএফও ও কোম্পানি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক সংঘটিত প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত সংঘবদ্ধ আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
২. ইস্যু ম্যানেজারের পরিবর্তে আব্দুল কাদের ফারুকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংঘটিত রিং শাইন টেক্সটাইলসের শেয়ার প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রেক্ষিতে তৎকালীন পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোম্পানি সচিবের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বিষয়টি দুদকে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড উক্ত উদ্যোক্তা বা তৎকালীন পরিচালকগণ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নির্বাহী পরিচালক, সিএফও, কোম্পানি সচিব সহ সংশ্লিষ্ট আব্দুল কাদের ফারুক ও অশোক কুমার চিরিমারসহ (ভারতীয় নাগরিক) মোট ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
৩. রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড এর সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরের (২০১৫-২০১৬,২০১৬-২০১৭,২০১৭-২০১৮,২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০) মিথ্যা ও বানোয়াট আর্থিক বিবরণী প্রত্যয়ন করায় সংশ্লিষ্ট ৪টি নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান (আহমেদ ও আখতার, সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং এবং এটিএ খান অ্যান্ড কোং) এবং তাদের পার্টনারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফাইন্যন্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
৪. রিং শাইন টেক্সটাইলসের বহিরাগত প্লেসমেন্টহোল্ডারগণ, যারা কোম্পানির হিসাবে অর্থ জমা না দিয়ে অথবা আংশিক জমা দিয়ে তাদের নামে শেয়ার বরাদ্দ নেয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্বসাৎ করেছেন, এমন প্লেসমেন্টহোল্ডারদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুদকে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৫. রিং শাইন টেক্সটাইলসের শেয়ার প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত যে দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছিল, তার মূলহোতা হিসাবে দায়ী আব্দুল কাদের ফারুক এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট হিসাবে অশোক কুমার চিরিমারের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি দুদকে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ