ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কোটি টাকার হদিস নেই ভিকারুননিসায়: গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৯ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১৩:৪৯, ২৯ জুলাই ২০২১
কোটি টাকার হদিস নেই ভিকারুননিসায়: গভর্নিং বডি ও অধ্যক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে

ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উন্নয়ন ও সৌন্দর্য্যবর্ধনের নামে কোটি টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি নিয়ম বর্হিভূত দরপত্র ও কার্যাদেশ ছাড়াই গভর্নিং বডির অনুমোদনে ২ কোটি সাড়ে ৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে অগ্রিম বিলের মাধ্যমে দেড় কোটির বেশি টাকা তোলা হয়েছে। তবে উন্নয়ন কাজে মাত্র ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ের হিসেব পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ সংক্রান্ত তদন্ত  প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের ২০ অক্টোবর ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উন্নয়ন সৌন্দর্য্যবর্ধন কাজ জন্য গভর্নিং বডির সভায় অনুমোদন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেইলি রোর্ডের মূল শাখার বিভিন্ন গেট সংস্কার, মেরামত ও ভেতরে সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এজন্য ২ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪৪ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। 

এটি বাস্তবায়নে অভিভাবক প্রতিনিধি সিদ্দিকী নাছির উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে গোলাম বেনজীর যুগ্ম আহ্বায়ক, ওহেদুজ্জামান (মন্টু) যুগ্ন আহ্বায়ক, এবিএম মনিরুজ্জামান সদস্য, অ্যাডভোকেট রীনা পারভীন সদস্য, বাদরুল আলম সদস্যসহ কয়েকজন শাখা প্রধানকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক জানান, এ কমিটির অন্যদের গুরুত্ব না দিয়ে সিদ্দিকী নাছির উদ্দিন অন্য অভিভাভক প্রতিনিধিদের ম্যানেজ করে নিজের ইচ্ছেমতো অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অগ্রিম ভাউচার দেখিয়ে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৭ টাকা তুলেছেন। কাজ শেষ না হলেও অধ্যক্ষের কাছে বাকি টাকার আদায়ে নানাভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন কমিটির আহ্বায়ক সিদ্দিকী নাছির উদ্দিন। এজন্য দুই দফায় অধ্যক্ষের রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষকে গালাগালি, অপদস্থ ও লাঞ্চিত করেছেন।

অনুসন্ধান জানাচ্ছে, শিক্ষা ক্যাডারের বির্তকিত সাবেক অধ্যক্ষ ফওজিয়ার দায়িত্বকালে গত বছর উন্নয়ন কাজের নামে ১৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিধি মোতাবেক সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকার উর্ধ্বে হলে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) অনুমোদন সাপেক্ষে দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ প্রদান করতে হবে। কোন কিছুই অনুসরণ না করে নিয়মবর্হিভূত অনুমোদন দিয়ে কোটি টাকা অভিভাবক প্রতিনিধিদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা হয়ে গেছে। এসব কাজের তেমন অগ্রগতি না থাকলেও টাকার জন্য বর্তমান অধ্যক্ষকে দফায় দফায় অপদস্থ করলে ৩০ জুন বিষয়টি তদন্ত করতে অধ্যক্ষ ইইডিতে চিঠি দেন। তার ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়। সম্প্রতি এ কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অভিভাবক প্রতিনিধি সিদ্দিকী নাছির উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের গড়া কমিটির মাধ্যমে নিয়মবর্হিভূত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় গভর্নিংবডি। তারা বিভিন্ন সময়ে অগ্রিম বিল প্রদান করে ১ কোট ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৭ টাকা উত্তোলন করলেও এ প্রকল্পের জন্য কোন দরপত্র ও কার্যাদেশ প্রদান করা হয়নি।

বলা হয়েছে, উন্নয়ন কাজের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার আশেকুর রহমানের দেওয়া তথ্য মোতাবেক ১৯টি কাজের মধ্যে ১০টি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যা বাবদ এ পর্যন্ত  ৫৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪৪৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি ১ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ৮৭৭ টাকার কোন হদিস পাওয়নি বলে তদন্ত  প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক প্রতিনিধি সিদ্দিকী নাছির উদ্দিন বলেন, আমি ৮০ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয় করেছি। গত ২৫ মার্চ আমি হিসেব বুঝিয়ে দিয়েছি। ব্যয় করেছি ৮৭ লাখ টাকা, বাকি টাকা এখনো পাইনি। মাটির নিচে কিছু কাজ রয়েছে সেসব কাজ দেখা যায় না। সেখানে বেশ কিছু টাকা ব্যয় হয়েছে। এ বিষয়ে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের কাছে সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তিনি প্রয়োজনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।

অধ্যক্ষের রুমে তালা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে  নাসির উদ্দিন বলেন, পুরো ক্যাম্পাসে সিসি টিভি রয়েছে। সেটা তো স্বয়ং অধ্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, সেটা তাহলে তিনি প্রকাশ করেননি কেন? তিনি এখন কেবল শুধু মিথ্যা কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। অধ্যক্ষ অফিসে আসেন না, কোন খবর রাখেন না। অধ্যক্ষ সবার সঙ্গেই উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে থাকেন। যা একজন অভিভাবকের সঙ্গে তার ফোনালাপে ধরা পড়েছে। এ বিষয়ে তারা লজ্জিত এবং বিব্রত বলেও জানান তিনি।

এই প্রসঙ্গে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে উন্নয়ন কাজের টাকার জন্য সিদ্দিকী নাছির উদ্দিন আমার সঙ্গে ভীষণ বাজে আচরণ করেছেন। দুই দফায় আমার রুমে তালা দিয়েছেন। পরে চেয়ারম্যান স্যার নাছিরের সঙ্গে কথা বলে তালা খুলে দেন।

তিনি বলেন, দুই কোটি টাকার কাজ দরপত্র ও কার্যাদেশ ছাড়া করা হয়েছে। এসব ঘটনার কারণে আমি ইইইডিতে চিঠি দিয়ে তদন্ত করতে বলেছি। তদন্ত  প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

ভিকারুননিসা অধ্যক্ষের ফোনালাপ: তদন্ত কমিটি গঠন
হঠাৎ কেন এমন বিতর্কে ভিকারুননিসা

ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে ভিকারুননিসার প্রিন্সিপাল যা বলছেন

ভিকারুননিসায় অ্যাডহক কমিটি গঠনের দাবি

ঢাকা/ইয়ামিন/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়