ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কর্মকর্তা হওয়ার পথ বন্ধ, মানতে নারাজ শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৬, ৩১ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১১:২৮, ৩১ জুলাই ২০২১
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কর্মকর্তা হওয়ার পথ বন্ধ, মানতে নারাজ শিক্ষকরা

সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে দুটি শর্ত পূরণ করে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ‌‌‌‘উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা’ পদের জন্য পরীক্ষা দিতে পারেন। শর্ত দুটি হলো—শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর এবং বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। এসব শর্তে আগে অনেক শিক্ষকই উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

তবে, সব শিক্ষকের ক্ষেত্রে এভাবে কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ থাকছে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা’। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে শুধু প্রধান শিক্ষকদের জন্য ‘উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার’ পদে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ রাখা হয়নি।

নতুন নিয়োগবিধিটি গত সপ্তাহে প্রশাসন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। এটি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, নতুন বিধিতে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি।

নিয়োগবিধি অনুযায়ী, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ২ হাজার ৫৮৯টি পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। নিয়োগে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে।

বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বোঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে উন্মুক্ত প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

অফিসারদের আর একটি পদ ইন্সট্রাক্টর (উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টার)। এ পদের নিয়োগে মোট পদের ৩৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৬৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

পদোন্নতির জন্য উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইন্সট্রাক্টর/পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে ন্যূনতম সাত বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির বিএডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি। সরাসরি নিয়োগে বয়স ৩০ বছর, তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সের কোনো উল্লেখ নেই।

উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে নিয়োগও একই নিয়মে। তবে এখানেও বিভাগীয় প্রার্থী বলতে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বোঝানো হয়েছে। দেশের ৬৭টি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) সাধারণ ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ইন্সট্রাক্টর পদেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগ রাখা হয়নি।

জানা গেছে, আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পর্যন্ত হতে পারতেন। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি ১৯৮৫ শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে পিএসসির নিয়োগবিধি ১৯৯৪ জারি হলে এটিইও পদে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন। ২০০৩ সালে সরকারি গেজেটেও এটিইও পদে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের কথা বলা ছিল এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের বোঝানো হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ পর্যন্ত এভাবেই চলছে।

এবার সচিব কমিটিতে পাস হওয়া নিয়োগবিধি ২০১৯-এ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থীর সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বিধিমালা এভাবে চূড়ান্ত হলে সহকারী শিক্ষকরা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, এই নিয়োগবিধি সংশোধন করে সবার সমান সুযোগ রেখে নতুন নিয়োগবিধি করা হোক। ডিপার্টমেন্টের বাইরে থেকে কর্মকর্তা পদে নতুন নিয়োগ দিলে তা প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি অবিচার করা হবে। এটা আমরা কখনোই মেনে নেবো না।

তিনি বলেন, অফিসার ও ইন্সট্রাক্টর পদে শতভাগ পদোন্নতি দিতে হবে। এর মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ সিনিয়রিটির ভিত্তিতে ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে দিতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) রতন চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা সব ধাপে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে এলে ছোটখাটো কিছু কাজ আছে সেসব শেষ করে সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালা বাস্তবায়ন করা হবে।

ইয়ামিন/মাহি   

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়