ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা

ছবির কোলাজ

রাহাত সাইফুল : ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্র আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে, একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ হত্যা করে। পরিকল্পিত গণহত্যার মুখে সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ।

 

জীবন বাঁচাতে প্রায় ১ কোটি মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙ্গালি সদস্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ এবং সর্বপরি দেশকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে দেশের সাস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরারও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এদের কেউ কেউ স্বশরীরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, আবার কেউ কেউ গান গেয়ে, লিখে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যে সব ব্যক্তিরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদন।

 

আব্দুল জব্বার খান : বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা এবং চিত্রনাট্যকার আব্দুল জব্বার খান। তার চিত্রনাট্য, অভিনয় এবং পরিচালিত মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র হিসেবে পরিচিত। ১৯৫৬ সালে তার রচিত নাটক ডাকাত (পরবর্তীতে উপন্যাস হিসেবে প্রকাশিত) অবলম্বনে তৈরি করেন মুখ ও মুখোশ শিরোনামের চলচ্চিত্রটি। মুখ ও মুখোশ-ই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তৈরি প্রথম সবাক চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনার পাশাপাশি এর মূল চরিত্রেও অভিনয় করেন। এরপর তিনি পরিচালনা করেন জোয়ার এলো (১৯৬২), উর্দূতে নাচ ঘর (১৯৬৩), বনসারি (১৯৬৮), কাচঁ কাটা হীরা (১৯৭০), খেলারাম (১৯৭৩) চলচ্চিত্র।

 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার খান মজিব নগর সরকারের চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ড, অনুদান কমিটি, সেন্সর বোর্ড, ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভে সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ষাট দশকের প্রথম ভাগে গঠিত পাকিস্তান পরিচালক সমিতির অন্যতম সংগঠক ছিলেন।

 

জহির রায়হান : বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, এবং গল্পকার জহির রায়হান। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাবেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে।  ১৯৬১ সালে তিনি রুপালি জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।

 

১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা মুক্তি পায়। জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তার বিখ্যাত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়া-তে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।

 

কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। জহির রায়হান দেশ স্বাধীন হবার পর তার নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি।

 

সৈয়দ হাসান ইমাম : অভিনেতা,আবৃত্তিকার এবং স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে হাসান ইমামকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় শিল্পীদের প্রতিবাদী সংগঠন বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ। যারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বর্জন করেন। গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তানি সরকার ৮ মার্চ থেকে বেতার টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

 

২৫ মার্চের পর হাসান ইমাম মুজিব নগরের চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ১৯৭১-এ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। সৈয়দ হাসান ইমাম মুজিবনগর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সালেহ আহমেদ নামে বাংলা সংবাদ পাঠ করতেন। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংবাদ পাঠ এবং নাট্য বিভাগের দায়িত্বভার বহন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানকে সভাপতি ও হাসান ইমামকে সাধারণ সম্পাদক করে মুজিব নগরে চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি গঠন করা হয়। যাদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল `লেট দেয়ার বি লাইট` নির্মিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠায় হাসান ইমাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

 

খান আতাউর রহমান : খান আতাউর রহমান  চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং প্রযোজক। তিনি খান আতা নামে পরিচিত। জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তার প্রথম পরিচালিত ছবির নাম অনেক দিনের চেনা। ছবিটি ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায়। তিনি সিরাজউদ্দৌলা, সাত ভাই চম্পা, অরুণ বরুণ কিরণমালা, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখি, দিন যায় কথা থাকে, পরশ পাথর,এখন অনেক রাত-সহ অনেক ছবি পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।  ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর তৈরি করেন আবার তোরা মানুষ হ যার বিষয়বস্তু ছিল যুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতা। ৮০’র দশকের শেষে বানান হিসাব নিকাশ এবং পরশপাথর নামের দুইটি ছবি। মুক্তিযুদ্ধের উপর ১৯৯৪ সালে তিনি এখনো অনেক রাত নামের একটি ছবি তৈরি শুরু করেন।

 

গাজী মাজহারুল আনোয়ার : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুচনা সংগীত জয় বাংলা বাংলার জয়। আর এই গানটি লিখেছেন বাংলা গানের এক জীবন্ত কিংবদন্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি এছাড়া ও একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল, একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়সহ স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা। তিনি একাধারে একজন রচয়িতা, নির্মাতা, নির্দেশক, প্রযোজক, গীতিকার ও সুরকার। ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ও লাভ করেন তিনি। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড, একাধিকবার বাচসাস পুরস্কারসহ শতাধিক পুরস্কার পান তিনি।

 

সোহেল রানা :  চিত্রনায়ক, প্রযোজক ও পরিচালক সোহেল রানা। ১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের ওরা ১১ জন চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি গল্প অবলম্বনে মাসুদ রানা ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। একই ছবির মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে তার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত করেন।

 

শিক্ষা জীবনে তিনি একজন ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ঝাঁপিয়ে পড়ের মুক্তিযুদ্ধে। তার জন্ম ঢাকায় হলেও পৈতৃক বাসস্থান বরিশাল জেলায়।

 

চাষী নজরুল ইসলাম : বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৬১ সালে খ্যাতিমান পরিচালক ফতেহ লোহানীর সাথে ‘আছিয়া’ চলচ্চিত্রে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর প্রখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রাকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারি হিসাবে ‘দুইদিগন্ত’ চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন ১৯৬৩ সালে। তারপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সবার মতো তিনিও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধভিক্তিক প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণ করেন। ১৯৭২-এ এই ছবির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে চাষী নজরুলের আত্ম প্রকাশ ঘটে।

 

আমজাদ হোসেন : অভিনেতা, লেখক এবং ব্যতিক্রমধর্মী চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন। তিনি ঊনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। লেখালেখির মাধ্যমেই তার সৃজনশীল জীবন শুরু। ছড়া দিয়ে সাহিত্যে অঙ্গনে তার প্রবেশ। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় বিখ্যাত দেশ  পত্রিকায়। ছোটদের জন্যেও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ও গল্পও লিখেছেন। ১৯৭০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত তার চিত্রনাট্যে নির্মিত হয় জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রটি। পরবর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। আমজাদ হোসেন নিজেও চলচ্চিত্র পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তার পরিচালিত গোলাপী এখন ট্রেনে উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্রের একটি।

 

খসরু : বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১জন’-এ অভিনয় করেন খসরু। তিনি বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন।

 

ফারুক : চিত্রনায়ক, প্রযোজক ফারুক। প্রথম জীবনে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি মুক্তি যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি লাঠিয়াল, নয়নমনি, সুজন সখি, সারেং বৌ, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে, মিয়া ভাই-সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

 

আহম্মেদ ইমতিয়াজ বুলবুল : বাংলাদেশের বিখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সংগীত পরিচালক। ১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প বা ঢালিউডসহ সংগীত শিল্পে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কার-সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

 

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু : বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের এক উজ্জ্বল নাম নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। তিনিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ বয়সেও গণতান্ত্রিক আন্দোলন আর স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সামনের সারিতেই থাকেন তিনি। দেখেন একটি উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন। ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতি আর রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছাত্রজীবন থেকেই, রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাতে কখনো নিজের দায়িত্ব ভুলে যাননি। আক্ষেপও আছে অনেক কিছুই না করতে পারার, তবে স্বপ্ন হারিয়ে যায়নি  মোটেও।  তিনি গেরিলা, একাত্তরের জিসু শিরোনামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

 

আলী যাকের : টেলিভিশন নাটক ও মঞ্চ নাটকে সমান জনপ্রিয় অভিনেতা আলী যাকের। তিনি একই সাথে দেশীয় বিজ্ঞাপন শিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ত্ব। একজন মুক্তিযোদ্ধা।

 

রাইসুল ইসলাম আসাদ : গুণী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। যিনি বেতার, মঞ্চ, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অভিনয় ও অভিনীত চলচ্চিত্র ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। একাধিকবার তিনি জাতীয় পদক পেয়েছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন ।

 

আব্দুল জব্বার : বিখ্যাত সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বার।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত সালাম সালাম হাজার সালাম এর মতো অসংখ্য উদ্বুদ্ধকরণ গানের গায়ক হিসেবে বেশি পরিচিত জব্বার।

 

এ ছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গান গেয়েছেন- সমর দাস, আপেল মাহমুদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, অরুণ গোস্বামী, মান্না হক, মাধুরী চ্যটার্জী, এম চান্দ, ইয়ার মোহাম্মদ, প্রবাল চৌধুরী, কল্যাণী ঘোষ, উমা খান, নমিতা ঘোষ, স্বপ্না রায়, জয়ন্তী লালা, অজিত রায়, সুবল দাশ, কাদেরী কিবরিয়া, লাকী আখন্দ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহালনবীশ, ফকির আলমগীর, মকসুদ আলী সাই, তিমির নন্দী, মিতালী মূখার্জি, মলয় গাঙ্গুলী, রফিকুল আলম প্রমুখ শিল্পীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেন।  



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ডিসেম্বর ২০১৫/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়