ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

আব্বু নিঃশব্দে প্রেরণা জোগান: সাবিলা নূর

সাবিলা নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৯, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আব্বু নিঃশব্দে প্রেরণা জোগান: সাবিলা নূর

বাবা যেন আনন্দের অন্য নাম

আমরা তিন ভাইবোন। দুই বোন এক ভাই। যখন ছোট ছিলাম আমার মনে হতো আব্বু আমার থেকে অন্য ভাইবোনদের বেশি আদর করেন। সময় তো থেমে থাকেনি, বোধ, বুদ্ধি, উপলব্ধিও পরিবর্তন হয়েছে। এখন আব্বুকে অন্যভাবে আবিষ্কার করি।

আব্বু একজন সরকারি কর্মকর্তা সেক্ষেত্রে আব্বুর আসলে কাজে প্রেসার অনেক থাকে। আমারও কাজের প্রেসার থাকে, অনেক সময় বাসায় ফিরতে দেরি হয়। আবার আব্বুও উনার রুটিনে চলেন সব মিলিয়ে অনেক দিন হয়ে গেছে আব্বুর সঙ্গে খুব কথা বলা, গল্প করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। এমনো হয়েছে আমি কাজ থেকে ফিরে দেখেছি আব্বু ঘুমিয়ে গেছেন।

করোনা পরিস্থিতে অনেকেরই সুযোগ হয়েছে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে সময় কাটানোর। আমি এই সুযোগটিও পাইনি। আমার বোন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আব্বু-আম্মু দুজনেই বোনের কাছে। ফিরে আসার কথা ছিল, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আর আসতে পারেননি। এবার রোজা-ঈদ সবই কেটেছে তাদেরকে ছাড়া। অন্যান্য বছর রোজার দিনে তো আসলে  অনেক কাজ থাকে, শুটিং নিয়ে ব্যস্ততা থাকে। যার ফলে, ইফতার বা সেহ্রি একসঙ্গে করার সুযোগ হয় না, এবার সুযোগ থাকার পরেও আব্বু-আম্মুকে কাছে পাইনি।

কিন্তু এই দূরত্বে থাকার দিনেও অনেক কথা হয়, যাকে বলে প্রাণ খুলে কথা বলা। আব্বুর সঙ্গে দিনে দুইবার কথা হয় ভিডিও কলে। অনেক কিছু নিয়ে গল্প হয় ইদানিং। কি করছি, না করছি খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও গল্প হয়।

আব্বুকে মাঝে মধ্যে ছোটখাটো গিফট দেওয়ার চেষ্টা করি। ফাদারস ডে-তে অনেক সময় একটা কেক বা নিজের হাতে বানানো কার্ড আব্বুকে উপহার দেওয়া হয়। আব্বু খুব খুশি হন। সব সময় যেটা দেওয়ার চেষ্টা করি সেটা হলো রেসপেক্ট।

২০১০ সালে একটি ফটোশুটের মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে কাজ শুরু করি। আব্বু শুরুতে আমার কাজটি খুব একটা সাপোর্ট করেননি। আব্বু মনে করতেন, তখন আমার কাজ করার বয়স হযনি। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি। স্কুলের পড়াশোনা কেমন হবে, কি হবে-সেটা নিয়ে আব্বুর খুব টেনশন ছিল।

ধীরে ধীরে যেটা হয়েছে আব্বু অনেকটা সাপোর্ট দিতে শুরু করেন। আমাদের আব্বুরা হয়তো খুব সামনাসামনি সাপোর্ট করেন না। হয়তো সামনে এসে বলবেন না যে, তোমার কাজ খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু আব্বুর সাপোর্টটা বুঝতে পারি যখন দেখি, আমার কোনো নাটক নিজে মনোযোগ দিয়ে দেখছেন আবার অন্য অনেককে নাটকটি দেখার জন্য ফোন করে বলছেন।

অনেক সময় অনেক রিউমার ছড়িয়েছে। সেই সময় আব্বুর কাছ থেকে যে সাপোর্ট পেয়েছি তাহলো—আব্বু আমার কথায় বিশ্বাস করেছেন। পেপারে কি আসছে, কে কি বলছে তার থেকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আমি কি বলছি সে কথায়। আব্বু পরিস্থিতি খুব বিবেচনায় নিতে পারেন, আমি কোন সময় কোন পরিস্থিতিতে আছি সেই জিনিসটাতে তিনি খুব প্রায়োরিটি দিয়েছেন। সেইটা আমার ক্ষেত্রে একটা মোরাল সাপোর্ট হিসেবে কাজ করেছে। আব্বুর একটু সাপোর্ট অনেকের নেগেটিভ কথাকে অগ্রাহ্য করার শক্তি জুগিয়েছে।

আব্বুর প্রতি যে অভিযোগের কথা বলেছি শুরুতে, তিনি আমার বোন কুহু আপুকে বেশি আদর করেন বা আমার ভাইকে বেশি আদর করেন বলে মনে হতো। এখন বুঝি যে আসলে সব ভাই-বোনকে একই রকম আদর করেন, একই রকম ভালোবাসেন। আব্বুর কাছ থেকে পাওয়া সেরা উপহার  ভালোবাসা, সেটা বড় হওয়ার পর তৈরি হওয়া উপলব্ধি।

আমি আব্বুকে হয়তো অনেক সময় কষ্ট দিয়েছি। হয়তো তিনি যেটা চেয়েছেন সেটা করিনি। তিনি যেটা চাননি সেটা করেছি। সবকিছুর পরেও আব্বু যে আমাকে এত সাপোর্ট দিয়েছেন বা সাপোর্ট দিয়ে আসছেন আমার কথা বিশ্বাস করছেন এর থেকে বড় পাওয়া আমার কাছে এ পর্যন্ত নেই।

বিকাশের যে টিভিসিটা করেছি, এটাতো সিক্যুয়েল। অনেকে মনে করেন আমার আব্বুর চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন তিনি সত্যিকার অর্থেই আমার আব্বু। আমার অনেক বন্ধুও জিজ্ঞাসা করেছেন। আমার আব্বু বলেন যে, ওই অ্যাডটা আমিও করতে পারতাম। মূলত, আব্বু এই টিভিসিটা অনেক পছন্দ করেছেন। আব্বু আমাকে যেটা বলেছেন যে এখানে আসলে খুব সিম্পলভাবে ফ্যামিলিকে প্রায়োরিটি দেওয়ার কথাটা উঠে এসেছে। আব্বু বলেছেন, এটাতে নাকি আমার অভিনয় খুব ভালো হয়েছে।

প্রথম টিভিসি করি ২০১০ সালে। তখন যে টাকা পেয়েছিলাম পুরোটা আব্বু-আম্মুকে দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে টাকা তারা খরচ করেননি। পরবর্তীতে আরো কাজ করি, সেখান থেকেও কিছু টাকা পাই। সেসব টাকাও আব্বু-আম্মুকে দিয়ে দিই। একদিন দেখি আব্বু আমার জন্য ল্যাপটপ কিনে এনেছেন। আর ল্যাপটপটা কেনা হয়েছিল আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে। আব্বু যখন ল্যাপটপটা আমার হাতে দিয়ে একথা বলেন, তখনই আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল।

আব্বু এরকমভাবে কখনো ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান, কখনো নিঃশব্দে প্রেরণা জোগান।

শ্রুতিলিখ: স্বরলিপি


ঢাকা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়