ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

থমকে গেছে কণ্ঠশিল্পী পিজিতের স্বপ্ন

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৭ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
থমকে গেছে কণ্ঠশিল্পী পিজিতের স্বপ্ন

পিজিত প্রসেঞ্জিত মহাজন। জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। বেড়েও উঠেছেন সেখানে। ছোটবেলায় স্কুল-কলেজে গান করতেন। বাবা ব্যবসায়ী। বড় ভাইও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মা ছিলেন গৃহিণী। ২০১৩ সালে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। ব্যবসায় লোকসান দেখা দিতে থাকে। বড় ভাই নিজের মতো সেটেল হন, অন্যদিকে বাবা আবার বিয়ে করেন। বিপাকে পড়ে যান কলেজ পড়ুয়া পিজিত প্রসেঞ্জিত মহাজন।

অভাব আর অবহেলায় দিন কাটতে থাকে পিজিতের। তিনি সিদ্ধান্ত নেন গানই পেশা হিসেবে নেবেন। গ্রাম থেকে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন। গানকে সঙ্গী করে পথ চলতে থাকেন। কোনো কোনো অনুষ্ঠানে একটি করে গান গাওয়ার সুযোগ পেতেন।

কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে চট্টগ্রামের অলিগলিতে রাত কেটেছে তার। এভাবে অনাদরে চলে কিছুদিন। একদিন দেখা হয় চট্টগ্রামের জনপ্রিয় গিটারবাদক জুলিয়াসের সঙ্গে। তার সকল কথা শুনে বিনা পারিশ্রমিকে একটা গান মিউজিক করে দেন জুলিয়াস। কষ্টের অপর নাম যেন পিজিত প্রসেঞ্জিত। আর এই গানের শিরোনামও ‘কষ্ট মিয়া’। গানটি ফেসবুকে প্রকাশের পর ধীরে ধীরে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ডাক পান পিজিত। গানের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়াও মাঝে মাঝে তার কাছে থাকতো না। বিষয়টি নিয়ে অনেক সময় অনেকেই বিরক্ত হতেন বলে জানান পিজিত প্রসেঞ্জিত মহাজন।

এসব টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে নিজেই একটি ব্যান্ড দল গড়েন। নাম দেন ‘ব্যান্ড চাটগাঁ’। পিজিত মহাজন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘২০১৬ সালে কোতয়ালীর মেঘনা হোটেলে তিন হাজার টাকায় ছোট একটি রুম ভাড়া নিই। গান নিয়ে আরো সিরিয়াসলি আগাতে থাকি। আস্তে আস্তে প্রোগ্রাম বাড়ে, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে প্রোগ্রাম করতে থাকি। চট্টগ্রামে জনপ্রিয়তা বাড়ে। অনুষ্ঠান করে ছোট রুমটিতে থাকতাম আর হোটেলে খেতাম। এভাবেই চলতে থাকে। ২০১৯ সালে বহদ্দারহাটে বড় একটি বাসা নিয়ে নিজেই রান্না করে খেয়েছি।’

পিজিত প্রসেঞ্জিত মহাজনের টার্গেট ছিল ঢাকা। এই শহরে এসে শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন লালন করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু সব স্বপ্ন থমকে আছে। পিজিত বলেন, ‘ঢাকায় গিয়ে গান করবো, এ লক্ষ্যে জমানো টাকায় কিছু গানের কাজে হাত দিই। এরমধ্যে ৭টি অডিও গান রেডি করি এবং ৪টি ভিডিওর কাজ করি। কিন্তু সব থমকে আছে।’

গত ভালোবাসা দিবস ও ঈদুল ফিতরে ‘দেবদাস’ এবং ‘মায়া’ নামে দুটি মিউজিক ভিডিও জি সিরিজ থেকে প্রকাশিত হয়। মুক্তির পর বেশ ভালো সাড়া ফেলে গান দুটি। তারপর স্বপ্নের সাগরে ভাসছিলেন পিজিত। কিন্তু কথায় আছে, সবার কপালে সুখ সয় না। পিজিতের জীবনেও যেন তাই হয়েছে। কারণ করোনার কারণে তার সব থেমে গেছে। জীবনে নেমে এসেছে কঠিন সময়। হাতে কোনো টাকাকড়ি নেই। যা ছিলো সব গানের পেছনে ব্যয় করেছেন। এদিকে সব কনসার্টও বাতিল করা হয়েছে। কয়েক মাসের বাসা ভাড়াও বাকি পড়েছিলো। 

পিজিত বলেন, ‘করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর প্রথম দুমাস বাসা ভাড়া দিতে পেরেছিলাম। এরপর থেকে ভাড়া বাকি পড়ে। বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য চাপ দেন। এক সময় খুব খারাপ ব্যবহার শুরু করে। বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে দিতে হয়। চলে আসি গ্রামে। গ্রামের মানুষও বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখছেন। টাকার জন্য ঢাকায় কিছু টিভিতে যোগাযোগ করি লাইভ প্রোগ্রাম করার জন্য। কিন্তু কোনো প্রযোজক সাড়া দেন নাই। সবাই বলে, ভালো মেয়ে শিল্পীদের সঙ্গে হিট গান লাগবে। আমার মতো এরকম বাংলাদেশের অনেক মিউজিশিয়ান জমিদারের যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। সরকারও কোনো প্রণোদনা দিচ্ছে না শিল্পীদের।’

‘কপালের লিখন না যায় খণ্ডন।’—প্রচলিত এ কথা যেন ষোলআনা মিলে গেছে পিজিতের সঙ্গে। হতাশা ব্যক্ত করে এই শিল্পী বলেন, ‘গ্রামে থেকে মিউজিক চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে প্রোগ্রাম না করে কতদিন? নিরুপায় হয়ে কিছুদিন আগে কিছু মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট বিক্রি করতে শহরে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে ছিনতাইকারী টাকা, মোবাইল সব কেড়ে নেয়, মারধরও করে। খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

 

 

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়