কোরবানির গরুর পিঠে নাতিদের বসিয়ে ছবি তুলতেন দিলদার
রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম
নাতিকে কোলে নিয়ে আপ্লুত দিলদার
চলচ্চিত্রের পর্দায় দিলদারের অভিনয় মানেই হাসির ফোয়ারা। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনি এতোটাই সফল ছিলেন যে, তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তাকে কেন্দ্র করে সিনেমার গল্প লেখা হয়েছে। এই কৌতুক অভিনেতা সব রেকর্ড ভেঙে নায়কের চরিত্রেও অভিনয় করেছেন।
২০০৩ সালে দিলদার মারা যান। মৃত্যুর এতোটা সময় পরেও দিলদার ভক্তের হৃদয়ে একই রকম আবেদন নিয়ে বেঁচে আছেন।
কেমন আছে দিলদারের পরিবার? ঈদের এই আনন্দ আয়োজনে হাসির মানুষটির অপূরণীয় শূন্যতা কতোটা অনুভব করেন জানতে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদক কথা বলেন দিলদার-কন্যা জিনিয়া আফরোজের সঙ্গে। জিনিয়া বলেন, ‘আমাদের ঈদের আনন্দের সবটুকু ছিল আব্বার জন্য। আব্বা চলে যাওয়ার পর সেভাবে আর ঈদের আনন্দ অনুভব করি না। বিয়ের পরেও আমি বাবার বাড়িতে ঈদ করি। কারণ আব্বা সবসময় চাইতেন তিনি মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ঈদ করবেন। আজ নাতি-নাতনি সবাই আছে, শুধু তিনি নেই।’
বাবার সঙ্গে ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জিনিয়া আফরোজ বলেন, ‘বাবার সঙ্গে ঈদের দিনের একটি স্মৃতি আমাকে এখনও কাঁদায়। অথচ তখন এটি হাস্যকর মনে হতো। আমার ছেলের বয়স তখন মাত্র তিন মাস। ঘুমের মধ্যে পাঞ্জাবি-পাজামা পরিয়ে কোলে করে বাবা ওকে ঈদগাহে নিয়ে গিয়েছিলেন। অতটুকু বাচ্চা ছেলে! আমরা ভয় পেলেও বাবার তাতেই ছিল আনন্দ। কারণ নাতি নানার সঙ্গে ঈদগাহে যাচ্ছে- এটাই ছিল বড় কথা।’
‘কোরবানির গরুর পিঠে নাতিদের বসিয়ে ছবি তুলতেন। আব্বা এটা খুব পছন্দ করতেন। অনেক তারকা ঈদ করতে দেশের বাইরে চলে যেতেন। আব্বা কখনও দেশের বাইরে ঈদ করতে চাইতেন না।’ বলেন জিনিয়া।
দিলদার ছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষ। ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। অথচ তিনি চাইতেন না তার সন্তানরা সিনেমায় জড়িয়ে পড়ুক। এমনকি তারা এফডিসি বেড়াতে যাক এটাও তিনি চাইতেন না। এ প্রসঙ্গে জিনিয়া বলেন, ‘আব্বা সবসময় আমাদের চলচ্চিত্র থেকে দূরে রাখতেন। চলচ্চিত্রে উৎসাহ দিতেন না। শুধু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে আমাদের নিয়ে যেতেন। এমনকিএমনকি আব্বা কখনও চাইতেন না আমরা এফডিসিতে যাই।’
পর্দায় দর্শক হাসিয়েছেন। বাস্তব জীবনে কেমন ছিলেন দিলদার? প্রশ্ন করতেই শোনা গেল ভিন্ন কথা। জিনিয়া বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে ভালোবাসতেন। একবার এক নাতির জ্বর হলো। তিনি শুটিং প্যাকআপ করে দিয়েছিলেন। যদিও পরিবারের সবাই আব্বাকে ভয় পেত। এমনকি আমার দাদিও আব্বাকে ভয় পেতেন। খুব রাগি ছিলেন।’
দিলদার মারা যাওয়ার পর অনেকেই কিছুদিন ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু এরপর সব শূন্য। জনপ্রিয় এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকীও কেটে যায় নীরবে। জিনিয়া বলেন, ‘গত দুই বছর হলো শিল্পী সমিতি থেকে আব্বার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া চলচ্চিত্রে তিনি আজ উপেক্ষিত। কেউ খোঁজ নেন না। হয়তো চলচ্চিত্র পরিবারের অনেকেই মারা গিয়েছেন, ফলে সবার খোঁজ রাখা কঠিন। তারপরও বলবো- আব্বার জায়গাটা কেউ নিতে পারেনি। তিনি স্পেশাল ছিলেন। সুতরাং তাকে সেভাবেই স্মরণ করা উচিত।’
ঢাকা/তারা
আরো পড়ুন