ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সৌমিত্রকে নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকরা

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ২১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১২:৪৩, ২১ অক্টোবর ২০২০
সৌমিত্রকে নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকরা

গত কয়েকদিন শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল ভারতীয় বাংলা সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জির। কিন্তু হঠাৎ করে তার স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা আবারো প্রকট হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ‘গ্লাসগো কোমা স্কেল’ অনেকটা নেমে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

১৬ সদস্যর একটি টিম সৌমিত্রর চিকিৎসা করছেন। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম কর এ টিমের সদস্য। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান—মঙ্গলবার এ অভিনেতার জিসিএস স্কোর গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৯-এ। আশঙ্কার বিষয় হলো—এই সূচক তিনে পৌঁছলে রোগীর ব্রেন ডেথ ধরা হয়। এই সূচক দেখেই বোঝা যায়, চিকিৎসায় রোগী কতটা সাড়া দিচ্ছেন।

গত কয়েকদিন ধরে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং উচ্চমাত্রায় স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছিল সৌমিত্রকে। স্টেরয়েড ছাড়া স্বাভাবিকভাবে তার মস্তিষ্ক কাজ করছে কি না তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সেখানেই বেঁধেছে জটিলতা। ডা. অরিন্দম কর বলেন—স্নায়ুর কার্যকলাপ স্বাভাবিক করতে আবার স্টেরয়েড ও ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হচ্ছে। এতে যদি কাজ না হয়, তাহলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।

হাসপাতালের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কয়েক দিন আগে প্রতিদিন ১০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হতো সৌমিত্রকে। কিন্তু শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হওয়ায় তা নেমে আসে ৪ লিটারে। অনেক সময় কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই তিনি থাকতে পারছিলেন। সৌমিত্র চ্যাটার্জির কিডনি, যকৃৎ, হার্ট-সহ সমস্ত অঙ্গই ঠিকঠাক কাজ করছে।

করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ দিন টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শুটিং বন্ধ ছিল। সতর্কতা মেনে সম্প্রতি শুটিংয়ের অনুমতি মেলে। যথাযথ সুরক্ষা মেনে শুটিংয়ে ফিরেছিলেন সৌমিত্র। নিজেকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। গত ৬ অক্টোবর ৮৫ বছর বয়েসি এই শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। চ্যাটার্জি পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্রর দাদার আমল থেকে চ্যাটার্জি পরিবার নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে বসবাস শুরু করেন। সৌমিত্র পড়াশোনা করেন—হাওড়া জেলা স্কুল, স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতার সিটি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৫৯ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সৌমিত্র। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কবি ও খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকার হিসেবে তার দারুণ খ্যাতি রয়েছে।

২০১২ সালে ভারতের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ পান তিনি। তাছাড়া ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অসংখ্য সম্মাননা তার প্রাপ্তির ঝুলিতে জমা পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্রান্সের ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ (২০১৮)।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়