ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

ইলিয়েনার ব্যর্থ প্রেম ও বিতর্ক

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ৫ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৫৮, ৫ জানুয়ারি ২০২১
ইলিয়েনার ব্যর্থ প্রেম ও বিতর্ক

ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ইলিয়েনা ডি ক্রজ। ১৯৮৭ সালের ১ নভেম্বর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা ছিলেন আইনজীবী। মা চাকরি করতেন হোটেলে, রিলেশনশিপ ম্যানেজার হিসেবে। জন্মের পর ইলিয়েনা প্রথম ১০ বছর কাটিয়েছেন মুম্বাইয়ে। তারপর বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে যান গোয়ায়। তারা ছিলেন গোয়ার ক্যাথলিক খ্রিষ্টান পরিবার। মায়ের কাজের জায়গা ছিল গোয়ার যে হোটেল, সেখানে প্রায়ই যেতেন ইলিয়েনা। হোটেলের ম্যানেজার কিশোরী ইলিয়েনাকে মডেলিং করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু শুরুতে তিনি পাত্তা দেননি।

একবার হোটেলেই মার্ক রবিনসনের সঙ্গে ইলিয়েনার পরিচয় করিয়ে দেন ওই ম্যানেজার। এরপর রবিনসনের সঙ্গে কথা বলে ইলিয়েনা ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মার্ক তাকে পোর্টফোলিও তৈরি করার পরামর্শ দেন। কলেজে পড়াকালীন স্থানীয় স্পা এবং অন্য সংস্থার হয়ে মডেলিং শুরু করেন ইলিয়েনা। তখন নিজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করে মার্ক রবিনসনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কিন্তু প্রথম দর্শনেই সেই পোর্টফোলিও বাতিল করে দেন মার্ক। তিনি বলেন—‘ছবিতে যা দেখাচ্ছে তার থেকে ইলিয়েনা অনেক বেশি সুন্দর।’

এরপর একজন পেশাদারকে দিয়ে পোর্টফোলিও তৈরি করান ইলিয়েনা। তারপর কাজ পেতে আর সমস্যা হয়নি তার। ক্যারিয়ারের স্বার্থে গোয়া থেকে ইলিয়েনা চলে আসেন মুম্বাইতে। পরপর বিজ্ঞাপনে কাজ পেতে থাকেন তিনি। রাকেশ রোশানের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তিনি। রাকেশের সুবাদে ইলিয়েনার পরিচয় হয় বেশ কয়েকজন পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে। কিন্তু বেশ কিছু দূর কথা এগিয়েও হিন্দি ভাষার সিনেমায় তার অভিনয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। এর মধ্যে মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয়ের একটি শর্ট কোর্স সম্পূর্ণ করেন ইলিয়েনা। ২০০৬ সালে তিনি সুযোগ পান দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। সে বছরই মু্ক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘দেবদাসু’। ইলিয়েনা এতে কাজ করতে রাজি হয়েছিলেন দুটি কারণে। এক. বিদেশে দেড় মাস শুটিং হবে। দুই. পারিশ্রমিক ভালো ছিল।

ইলিয়েনা জানতেন শুটিং করার সময় ভাষা নিয়ে তার সমস্যা হবে। তার আশঙ্কা সত্যি হয়েছিল। তেলুগু ভাষা তার কাছে খুব কঠিন ছিল। ফলে ইউনিটে তাকে নিয়ে যথেষ্ট হাসিঠাট্টা হতো। কিন্তু তিনি হার মানেননি। এ ভাষা আয়ত্ব করতে না পারলেও অভিনয় করেন মনপ্রাণ দিয়ে। মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি বক্সঅফিসে সফল হয়। আর ইলিয়েনার অভিনয়ও প্রশংসা কুড়ায়। প্রথম চলচ্চিত্র সুপারহিট হওয়ার ফলে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এক চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ হওয়ার আগেই নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন। একসঙ্গে তিন-চারটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন তিনি।

এ সময় দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একাধিক নায়কের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রভাস। তবে প্রথমে তারা দুজনেই এই গুঞ্জন অস্বীকার করেন। পরে ইলিয়েনা এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি দক্ষিণের এক সুপারস্টারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। কিন্তু পরে তার কাছে প্রতারিত হন তিনি। এরপর নিজেকে আরো কাজে ডুবিয়ে রাখেন। সময়ের সঙ্গে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া নায়িকা হয়ে ওঠেন।

ইলিয়েনা অভিনীত তেলুগু চলচ্চিত্র ‘পোকিরি’-এর হিন্দি সংস্করণ ছিল ‘ওয়ান্টেড’। এতে সালমান খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন ইলিয়েনা। কিন্তু রাজি হননি। কারণ তার মনে হয়েছিল একই বিষয়ের উপর একাধিক ভাষায় অভিনয় করবেন না। তাছাড়া তখন তার পরীক্ষাও ছিল। এরপর ‘কিক’ চলচ্চিত্রে সালমান খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে তা ফিরিয়ে দেন তিনি। দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সুপারস্টার হওয়ার পরে সালমানের বিপরীতে কাজ করতে চাননি ইলিয়েনা। কারণ তার মনে হয়েছিল এর ফলে প্রচারের সব আলো কেড়ে নেবেন সালমানই। তার নিজের কোনো লাভ হবে না। তবে বলিউডেই ‘বরফি’ চলচ্চিত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ইলিয়েনা। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, রণবীর কাপুরের মতো তারকার সঙ্গে স্ক্রিনশেয়ার করেন তিনি। এই চলচ্চিত্রে বাঙালি তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছোট পরিসরে বড় তারকাদের পাশে থেকেও প্রচারের আলো নিজের উপর টানতে সফল হন ইলিয়েনা।

এরপর বলিউডে পর পর বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়েনা। ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো, ‘ম্যায় তেরা হিরো’, ‘হ্যাপি এন্ডিং’, ‘রুস্তম’-সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করেন ইলিয়েনা। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় ‘বাদশা’। এই চলচ্চিত্রে গানের দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন অজয় দেবগনের সঙ্গে। সেখানে ইলিয়েনার শরীর থেকে কোট খুলে পড়ার দৃশ্যটি ছিল আলোচনার শীর্ষে। পরে এ অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন—ওই দৃশ্যের শুট করা তার কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে অজয় দেবগন কাজটি সহজ করে দিয়েছিলেন। সাফল্য পাওয়ার পরও বলিউডে বেশি অভিনয় করেননি ইলিয়েনা। পরবর্তীতে বেছে বেছে কাজ করেন তিনি।

অভিনয়ের গুণ যাতে নষ্ট না হয়—বিষয়টি সবসময়ই মাথায় রেখেছেন ইলিয়েনা। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে আক্ষেপ এই অভিনেত্রীর। তার অভিযোগ, কোনো নায়ক বা পরিচালক বা প্রযোজকের প্রেমিকা না হওয়ার জন্য বহু চলচ্চিত্র থেকে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েছেন তিনি। ফলে অবসাদেও ভুগেছেন। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে অস্ট্রেলীয় ফোটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু নিবোনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন ইলিয়েনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যান্ড্রুকে তার স্বামী বলেও পরিচয় দিতেন এই নায়িকা। অনুরাগীরা ধরে নিয়েছিলেন, তারা গোপনে বিয়ে করেছেন। তার ভারী চেহারা দেখে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, তিনি কি সন্তানসম্ভবা? কিন্তু সব জল্পনা উড়িয়ে দেন ইলিয়েনা। ২০১৯ সালে শোনা যায় তাদের বিচ্ছেদের খবর।

অ্যান্ড্রু বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা ছিলেন। সব জেনেও ইলিয়েনা এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ব্রেক আপের পরে ইলিয়েনা গভীর অবসাদের মুখে পড়েন। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক করতে থেরাপিস্টের দ্বারস্থ হন এই অভিনেত্রী। ধীরে ধীরে ইলিয়েনা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসেন। খ্যাতির পাশাপাশি বিতর্কেও জড়িয়েছেন ইলিয়েনা। যৌনতা নিয়ে মন্তব্য করার বরাবরই স্পষ্টবাদী তিনি। একবার বলেছিলেন—‘যৌনতা তার কাছে রিল্যাক্সেশনের অন্যতম মাধ্যম।’ এছাড়া ২০১২ সালে মোহন নটরাজন নামে এক প্রযোজক অভিযোগ করেছিলেন—ইলিয়েনা তার কাছ থেকে ৪০ লাখ রুপি অগ্রিম নিয়ে তা আর ফেরত দেননি।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ