ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘গার্মেন্টস মালিকরা মন্ত্রী হচ্ছেন, শ্রমিকরা হচ্ছেন শোষিত’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ১ মে ২০২১   আপডেট: ০৬:১৭, ২ মে ২০২১
‘গার্মেন্টস মালিকরা মন্ত্রী হচ্ছেন, শ্রমিকরা হচ্ছেন শোষিত’

বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে পহেলা মে। আজ শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিন। শ্রমিকদের নিয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত অসংখ্য গান গেয়েছেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। তাঁর গান অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের প্রেরণা জুগিয়েছে। শোষিতের পক্ষে তাঁর কণ্ঠ সবসময়ই সোচ্চার। মে দিবস উপলক্ষে রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রাহাত সাইফুল কথা বলেন ফকির আলমগীরের সঙ্গে। কথোপকথনের অংশবিশেষ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

রাহাত সাইফুল: করোনাকাল। মহামারির এই সময়ে পালিত হচ্ছে মে দিবস। কীভাবে কাটবে এবারের এই ঐতিহাসিক দিন?

ফকির আলমগীর: প্রতিবারই মে দিবসে আমাদের অনুষ্ঠান থাকে। করোনাসৃষ্ট মহামারির কারণে এবার আর জনসমাবেশে মে দিবসের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে ভার্চুয়ালি হচ্ছে। এবার আমার তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে মে দিবসে। এছাড়া বিটিভিতে মে দিবসের গান গাইব। বাংলাদেশ গনসংগীত থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠান করা হবে। সেখানেও গাইতে হবে।

রাহাত সাইফুল: এমনিতেই শ্রমিকেরা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। মহামারি তাদের জন্য নতুন এক অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।

ফকির আলমগীর: ১৮৮৬ সালে শ্রমিকরা রক্ত দিয়েছিল। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা রক্ত দিতে বাধ্য হয়েছিল। তারপর থেকে দু’একবার গত শতকে পৃথিবী বিপর্যস্ত থাকলেও গত দই বছর পৃথিবী অসুস্থ। আমি মনে করি, করোনার এই দুর্যোগ কেটে যাবে, মানুষ আবার হাসবে, মানুষের উদ্ভাবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দুর্যোগ মে দিবসকে ভুলিয়ে দিতে পারবে না। মে দিবস হচ্ছে জীবিকার সংগ্রাম, মানুষের রুজি-রুটির সঙ্গে জড়িত। শোষণ বঞ্চনা যতদিন থাকবে, অন্যায় অবিচার যতদিন থাকবে, ততদিন মে দিবস থাকবে।

রাহাত সাইফুল: এই দিনে আপনার প্রত্যাশা কী?

ফকির আলমগীর: আমি প্রত্যাশা করি, মানবিক পৃথিবী গড়ার লড়াই মে দিবসে হবে৷ কারণ এখনও শোষণ বঞ্চনা রয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৮ বছর গত হলো, এখনও হত্যার বিচার হয়নি৷ শ্রমশোষণ চলছে। শ্রম আইন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সঠিকভাবে শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হচ্ছে না। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুখে অনেক কথা, কাজের প্রতিফলন নেই। মালিকদের মুখের আর কাজের সমন্বয় নেই।

রাহাত সাইফুল: গার্মেন্টস শ্রমিকরা কেমন আছে বলে মনে করছেন?

ফকির আলমগীর: গার্মেন্টস মালিকরা মেয়র হচ্ছেন,  এমপি হচ্ছেন, মন্ত্রী হচ্ছেন। কিন্তু শ্রমিকরা যে অসহায় ছিলেন তেমনি আছেন। তারা এখনও শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত।

রাহাত সাইফুল: শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষদের জন্য আপনি গণসংগীত বেছে নিলেন কেন?

ফকির আলমগীর: গণসংগীতের আলাদা একটা শক্তি আছে। এটি সহজেই মানুষের গভীরে পৌঁছে যেতে পারে।   আমি লড়াইয়ের গান বেছে নিয়েছি সেই জায়গা থেকে, মানুষকে ভালোবেসে। সংগীতের অনেক শাখায় গান করেছি কিন্তু আমি গণসঙ্গীতে এসে স্থির হয়েছি। কারণ এই গান শোষণ, বঞ্চনার বিরুদ্ধে কথা বলে। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলে। অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এ জন্যই আমি গণসঙ্গীত বেছে নিলাম। সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই- এটাই মূল কথা। আজকে আমার গাওয়া কত গান প্রচারিত হবে, আমার গানে মুখরিত হবে মিডিয়া- সবগুলো গানেই আছে মানুষের কথা।

রাহাত সাইফুল: আপনার গান শ্রোতাপ্রিয়- এর কারণ কী বলে মনে করেন?

ফকির আলমগীর: শ্রমিক ভাইদের জন্য আমি সহজ-সরলভাবে গান করি। এসব গানে শ্রমিকদের কথা থাকে। শ্রমিকরা এই গানগুলো খুব সহজেই বুঝতে পারেন। এটাই মূল কারণ। তারা মনে করেন গানগুলো তাদের জন্যই গাওয়া হয়েছে। 

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়